Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিলুপ্তির পথে নোয়াখালীর শতবর্ষী নলদিয়া মেলা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:২২ AM
আপডেট: ১৬ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:২২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি বিডিমর্নিং


নুর উদ্দিন মুরাদ,কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী-নোয়াখালী মিলনাস্থলে দাগনভূঞা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে মেলা এখন বিলুপ্তি পথে। একসময় মাজারকে কেন্দ্র করে বসা নলদিয়া দরগাহেরও এই মেলাই লাখ লাখ লোকের সমাগম হত। নানা সমস্যার কারণে জৌলুস হারিয়েছে গেছে এই মেলার।

শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ফেনী  ও নোয়াখালী জেলার মিলনস্থল দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুরে এ মেলা বছরের ১ মাঘ থেকে ১০-১৫ দিন ব্যাপী এ মেলার আয়োজন হয়তো। তবে মেলাটি ১ মাসের মতো থাকতো।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আধ্যাত্মিক পুরুষ ওলিয়ে কামেল হাফেজ দেওয়ান ফকির আবদুর রশিদ (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আগমন করেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করা শুরু করেন এবং তার দীক্ষায় বহু মানুষ সেখানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কালক্রমে তিনি ইন্তেকাল করলে তার ভক্ত মুরিদানরা বিগত ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মত বার্ষিক ওরস মাহফিলের আয়োজন করে। ওরশ মাহফিলকে ঘিরে সেখানে দোকান পাট বসতে থাকে এবং দু’তিন বছরের মাথায় সেটি মেলায় রূপান্তরিত হয়। শুরুতে ওরসকে ঘিরে দোকান পাট ও মেলার উৎপত্তি ঘটলেও বর্তমানে ওরস আয়োজন নেই।

অঞ্চলের সর্বত্রই বিরাজমান উচ্ছ্বাস-হৈ হুল্লোড় আর অজানা আনন্দে ঘিরে থাকতো শিহরণ। একটা সময় ছিলো, যখন এ অঞ্চলের মানুষ এ নলদিয়া মেলাকে ঘিরেই সাজাতো তাদের নানারকম পরিকল্পনা, ছিলো আলাদা ‘বাজেট’ও!

জনশ্রুতি আছে- ‘শিশুর দোলনা থেকে শুরু করে মৃতের পালঙ্ক, সব কিছুই মেলে নলদিয়া মেলায়।’ দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসতেন তাদের পণ্য। সেসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন মেলায়।

সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আনাগোনা, মেলার হরেক রকম আয়োজন- সব কিছু মিলিয়ে মাঘ এর প্রথম থেকে সাজ সাজ রব বিরাজমান ছিলো সমতটের জনপদ এ নোয়াখালী-ফেনী জেলার মিলনাস্থল। আর স্থানীয় বাসিন্দারা দিন গুণতেন- কবে আসবে মাঘ; ঘিরে বসবে মেলা, হবে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর হুল্লোড়। যদিও প্রতি মাঘ মাসের ১  তারিখ মেলা শুরু হয়- কিন্তু পরিবেশ উল্লাসমুখর হয়ে উঠে তারও আগে থেকে।

ফেনী-নোয়াখালীর বিখ্যাত হোটেলগুলোকে এ মেলা যেমন আলোকিত করতো তেমনি যাত্রা, সার্কেস, নাগরদোলা, শিশুদের পুতুল নাচ, খেলনা দোকান, সাগরের বড় বড় মাছ এবং ঐতিহাসিক কাঠের ফার্ণিচার এ মেলার প্রধান বাণিজ্য ছিল।

সরকারী দস্তাবেজ অনুসারে ১৯২৩ সালে এই মেলার কথা উঠে আসলেও বয়স্ক লোকেরা বলেন, তারা তাদের বাপ দাদার কাছেও এই মেলার কথা শুনেছেন। এই মেলায় পাওয়া যেতনা এমনকোনো পণ্য নেই। আশপাশের এলাকার মানুষের জীবনের অংশ এই মেলা। মেলার সময় বউরা বাপের বাড়ী থেকে স্বামীর বাড়ী চলে আসে। আর এলাকার ঝিয়েরা চলে আসে বাপের বাড়ীতে। জামাই বেড়াতে যায় মেলা থেকে বড়ো মাছটি নিয়ে শ্বশুরবাড়ী আর মেয়েজামাইবাড়ীতে মেলার ফল মিষ্টি পাঠানো ছিলো এলাকার রেওয়াজ।

বিগত কয়েক বছর ধরে কাঠের ফার্নিচার ক্রয় বিক্রয়ের জন্য এই মেলা দেশব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলো।

স্থানীয়দের মতে, ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসক পক্ষ থেকে অনুমতি না থাকায় মেলা হয়নি। প্রতি বছর মেলাকে ঘিরে দুটি গ্রুপে সক্রিয় থাকতো। একটি মেলার ভূমি মালিকানাধীন গ্রুফ, অন্যটি বহিরাগত।  আইন শৃঙ্খলা অবনতি, মদ জুয়ার আসর এবং অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন থাকায় এলাকায় চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধ ও সংঘাতের আশংকায় মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার পর থেকে বিগত কয়েক বছর মেলা বন্ধ রয়েছে।

Bootstrap Image Preview