Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও প্রাণী

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৮ PM
আপডেট: ১১ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


সুন্দরবনের পরেই হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। আর এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এ ছাড়া শুকনো ও চিরহরিৎ এ বন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল।

রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এ ছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল।

সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় এর অবস্থান। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটির আরো সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে (২০০৯) এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভালো অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে ধ্বংসের মুখে।

রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার পূর্বে উত্তর দিকে এবং সিলেট থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। অভয়ারণ্যটি রেমা ছনবাড়ী এবং কালেঙ্গা বিটের সমন্বয়ে গঠিত। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রেমা চা-বাগান, পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্য এবং পূর্বদিকে ভারত হিল রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ। রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক একমাত্র ভার্জিন বন।

হবিগঞ্জ জেলায় বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট-কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত। এই অভয়ারণ্যে ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ গাছপালা-লতাপাতা আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলো হচ্ছে আওয়াল, সেগুন, কাঁকড়া, নেউর, হারগাজা, গন্ধরই, হরীতকী, বহেরা, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, চামকাঁঠাল, কাউ, কদম, রাতা, চিকরাশী, চাপালিশ, নিম, বনমালা ইত্যাদি।

অভয়ারণ্যে আছে ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬৭ প্রজাতির পাখি যেমন ভিমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ বা মুরগি, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শ্যামা, শালিক, শামুক খাওরি, টুনটুনি। রেমা-কালেঙ্গাতে দেশের বিপন্ন প্রায় পাখি শকুনেরও দেখা মেলে। দেশে এখন মেরেকেটে ৫০০টির মতো শকুন বেঁচে আছে যার ১০০টিরই বসবাস এই বনে এবং ৩৭টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী হচ্ছে বন্যশূকর কালো, বন্যশূকর সাদা, বানর, হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, খরগোশ, ছোট হরিণ, মেছোবাঘ, মেছোবিড়াল, বনকুকুর বা রামকুত্তা।

বিস্তীর্ণ এ অঞ্চলটি যেহেতু প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, এ জন্য বনের দেখভালের জন্য রয়েছে ১১টি ইউনিট ও ৭টি ক্যাম্প। ১৪ হাজার ২৮১ একরের মধ্যে প্রায় ৪৪৩৭ একর এলাকা গড়ে উঠেছে জীববৈচিত্র্যের ‍অভয়ারণ্য হিসেবে। এর সিংহভাগ কালেঙ্গা ও ‍অল্প কিছু অংশ পড়েছে রেমা বিটে। এজন্য নাম রেমা-কালেঙ্গা, কিন্তু মূল বিট আসলে কালেঙ্গা।

এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হলো- উল্টোলেজি বানর, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরো রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বনশূকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। কোবরা, দুধরাজ, দাশ, লাউডগা প্রভৃতিসহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়।

অবহেলায় গত কয়েক বছর ধরে অবিরত চলছে গাছ কাটা ও বনের নানা সম্পদ আহরণ। প্রতিনিয়তই গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। গত ৫ বছরে রেমা কালেঙ্গা ও সাতছড়ি রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক গাছ কাটা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময়ে বনগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার বনজ সম্পদ পাচার হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বনাঞ্চল বৃক্ষ ও জীব-বৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়বে। এ প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

Bootstrap Image Preview