Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির নন বরং তিনি সফল বিশ্বনেতা'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৫৯ PM
আপডেট: ১০ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:১৭ PM

bdmorning Image Preview


আজ ১০ জানুয়ারি-২০১৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি তার স্বপ্নের সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পদার্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে পেয়ে জাতির স্বাধীনতার স্বাদ পরিপূর্ণ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে বিজয় অর্জন করলেও তা অপূর্ণ রয়ে যায় স্বাধীনতার স্বপ্নপূরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগারে বন্ধিত্ব জীবনের কারণে।

বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে জাতি স্বাধীনতার পরিপূর্ণ স্বাদ লাভ করে ১০ জানুয়ারি-১৯৭২ সালে। বিডিমর্নিং এর সাথে সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদগণ।

ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী এবং বর্তমান পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ বিডিমর্নিং এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৫১ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আমি আন্দোলন শুরু করি। তাঁর সাথে ১৯৫১ থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত কয়েকবার জেল খেটেছি। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তিদূত।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন,  ৬৬ এর ৬ দফা, ৭০ এর নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রধানশক্তি। ১৯৭১ সালে তিনি আমাদের একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। এর বিনিময়ে অনেক প্রাণ হারাতে হয়েছে। অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কিন্তু বিশ্বের বুকে আমাদের নতুন একটি জাতি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে পাকিস্তানের কারাগারে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে সেখানে কবর খোঁড়া হয়েছিল তবু তিনি পাকিস্তানীদের কাছে নতিস্বীকার করেননি। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে পাকিস্তানী শাসক তাঁর ফাঁসি কার্যকর করতে পারেনি। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান জেল থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন ও ভারতের দিল্লী হয়ে ১০ জানুয়ারি তিনি তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য দেশবাসী উদ্গ্রীব ছিল কখন তিনি দেশে ফিরবেন? সকলের অন্তরের আকুতি ছিল তিনি নিজে কখন দেশটি পরিচালনা করবেন? ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে অবশেষে বিশ্ববাসীর চাপের কারণে পাকিস্তান সরকার তাকে জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি স্বদেশে ফিরে এসে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক-হায়েনা মোশতাকবাহিনী তাকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালির আশা-আকাঙ্খার প্রতীককে ধ্বংস করে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেন, নানা পথপরিক্রমায় ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি অনেক পরিশ্রম করে দলটি পুনর্গঠন করে আজ দেশের চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্ব বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বপ্ন দেখিয়ে স্বাধীন একটি দেশ উপহার দিয়েছিলেন ঠিক তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২১ ও রুপকল্প-২০৪১, ২০৭১ ও ডেল্টাপ্লান-২১০০ উপহার দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আজ ১০ জানুয়ারি সকাল শুরু করেছি ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশ প্রত্যার্তন করেছিলেন। সেদিনের স্মৃতিটি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা বা ভাষা কোনটায় আমার জানা নেই। শুধু অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনুভব করতে পারি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী এবং ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন বিডিমর্নিং এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিনের স্মৃতি আমাদের সবচেয়ে আনন্দের। কেননা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের পূর্বে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে যান।

এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, আমরা দীর্ঘ ৯ মাস তাঁর নামে, তাঁর আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে দেশকে স্বাধীন করেছি। নতুন একটি জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নিয়েছি। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে আশার বাণী এনে দিয়েছে।

রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল পাকিস্তানীরা তাকে কিছুই করতে পারবে না। তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে তিনি ফেরত আসবেনই। তাকে যতই অত্যাচার-নির্যাতন করা হোক তিনি তাঁর সোনার বাংলায় ফেরত আসবেন। বঙ্গবন্ধুকে দমিয়ে রাখার কোন শক্তি পাকিস্তানের ছিল না। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুচক্রীরা তাঁকে হত্যা করে সদ্য স্বাধীন দেশটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল কিন্তু তারা তা পারেনি। কারণ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। আজ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিকে উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আপনারা সাংবাদিকরা মতামত প্রকাশ করতে পারছেন। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন। তিনি যদি দেশটাকে স্বাধীন না করতেন তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও চারবারের নির্বাচিত নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বিডিমর্নিং এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া কখনোই বাংলাদেশকে চিন্তা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর পুরো জীবনটাকে অধ্যায়ন করতে হবে। কেননা ছাত্র মুজিব থেকেই তিনি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তিনি যখন গোপালঞ্জে পড়ালেখা করেন তখন থেকেই তার মানুষের জন্যে কাজের সূচনা। কলকাতায় থাকাকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ বিভিন্ন নেতাদের সাথে কাজ করেছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন আইন বিভাগে। তখন সেখানে থেকে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জেলে থেকেও ভাষা আন্দোলনের জন্যে অনশন করেছেন। তারপর মুক্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায়-সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে আন্দোলন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। অন্যরা মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব বহাল রাখলেও তিনি অন্যায়ের কাছে হার মানেননি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়ে তিনি বাঙালির অন্যতম মুক্তির দূতে পরিণত হন। ১৯৬৯ এর আগরতলা মামলা দিয়ে পাকিস্তানীরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু আমাদের আন্দোলনের কারণে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় তারা। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়। তারপরই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। তাই বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে হলে তার পুরো জীবন অধ্যায়ন করতে হবে।

মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির জন্য নন বরং তিনি অন্যতম সফল বিশ্বনেতা। বাংলাদেশের অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

Bootstrap Image Preview