Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফরিদপুরের সেই সহিংস এলাকায় পুনরায় হামলার আশঙ্কা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৩৪ PM
আপডেট: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন) আসনে নির্বাচন পরবর্তী বেশকিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থকদের সাথে বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তবে, নির্বাচনের দিন থেকে শুরু করে এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া, মানিকদহ, কালামৃধা ও সদরপুরের চরমানাইর ইউনিয়নে শতাধিক বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। এরমধ্যে নজীরবিহীন ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ভাঙ্গার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাটরা গ্রামে। এ গ্রামের কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এমপি নিক্সন চৌধুরী।

খাটরা গ্রামে হামলার শিকার হওয়া পরিবারগুলো হচ্ছে- শাহীন মোল্লা, শহিদুল ইসলাম সদন মেম্বার, আশরাফ ফকির, রব ফকির, নিখিল চন্দ্র সরকার, সর্বেশ্বও, অনিল গাইন, ফনি বেপারী, নির্মল গাইন, সাধু সত্য রঞ্জন, সারথী গাইন, ত্রিনাথ, অজিত গাইন, আরতি গাইনসহ আরো কয়েকটি পরিবার।

নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক খাটরা গ্রামের শাহিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েক শত ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় হামলা চালায়। এসময় তারা ১২/১৫টি বাড়ি ভাংচুর করে। হামলাকারীরা ভাংচুরের পাঁশাপাশি ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায়। এসময় তারা মহিলাদের উপর চড়াও হয়।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার শহিদ মিয়া জানান, নির্বাচনের দিন ও পরের দিন কাজী জাফরউল্লাহ’র সমর্থকেরা আমাদের গ্রামে হামলা করে বাড়ী ঘর ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।

সরেজমিন খাটরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটিতে পুরুষ মানুষের তেমন দেখা মেলেনি। নারীরা বাড়িতে থাকলেও তাদের চোখে মুখে অজানা আতঙ্কের ছাপ।

খাটরা গ্রামের কমপক্ষে ৭টি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, আলমিরা, রান্না করার হাড়ি-পাতিলও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনটি বাথরুমও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ির টিউবয়েলও উপড়ে ফেলা হয়েছে। ঘরে থাকার মতো কোন পরিস্থিতি নেই। ঘরের মধ্যে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোটর সাইকেল, টিভিসহ মূল্যবান আসবাবপত্র নিয়ে যায়। হামলাকারীরা ঘরের বিদ্যুতের সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

হামলার শিকার হওয়া কয়েকটি বাড়ির নারীরা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এসময় কয়েকজন নারীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। হামলাকারীরা যাবার সময় হুমকি দিয়ে বলে যায়, 'মামলা দিলে গ্রামছাড়া করা হবে'। তারা জানান, বর্তমানে আমাদের পুরুষ মানুষেরা পুনরায় হামলার ভয়ে গ্রাম ছাড়া রয়েছে। গ্রামে এলে তাদের হত্যা করা হবে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

হামলার শিকার সেলিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা ঘরে প্রবেশ করে ইচ্ছেমতো ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।

ইউপি মেম্বার শহিদ মিয়া বলেন, হামলার সময় স্থানীয় মসজিদের ইমাম চেয়ারম্যানের হাত-পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইলেও তারা হামলা বন্ধ করেনি।

সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া শাহিন মোল্লা জানান, আমাদের বাড়িতে ঢুকে ৬টি রুমে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। ঘরের এমন কিছু নেই যা ক্ষতি করেনি। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।

ভাংচুরের শিকার হওয়া সবাই স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক হিসাবে পরিচিত।

এদিকে খাটরা গ্রামে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের পর গ্রামজুড়ে অজানা আতংক বিরাজ করছে। দিনের বেলাও গ্রামে পুরুষ মানুষের দেখা মিলছে না। পুনরায় হামলার ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। হামলার শিকার হওয়া পরিবার গুলো এখন মানবেতরভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা আত্বীয়-স্বজনদের বাড়ীতে থাকছেন।

হামলার পর থেকে খাটরা গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন মোতায়েন রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাটরা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন মানবাধিকার কমিশনের হিরন্নময় বাড়ৈ। তার নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছেন।

কাউলীবেড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুদু মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়েছে। হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview