Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আখ চাষ ফলনে বিপর্যয়, দিশেহারা চাষী ও ব্যবসায়ীরা

জাহিদ হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:২১ PM
আপডেট: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:২৩ PM

bdmorning Image Preview


চিনিকলের জোনভূক্ত না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আখ চাষীরা ও ব্যবসায়ীরা আখ মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই আখ মাড়াইয়ের সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এবছর আখ ফলনে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। উৎপাদন অনেক কম হওয়ায় দিশেহারা কৃষক। কোন কোন জমিতে কৃষকের খরচই উঠবে না বলছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আখের গুড়ের দামও কম হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছেনা ব্যবসায়ীদের। আখের জমিতে এবছর ভাইরাস জনিত মোড়ক রোগে জমিতে আখের ফলন হচ্ছে না। অনেক জমির আখ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। 

শিবগঞ্জ উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে এবছর ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। এবছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলন বিপর্যয়ের কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না বলে মনে করছেন চাষীরা ও কৃষি বিভাগ। গত বছর চাষ হয়েছিলো ৭ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে। তবে আখের জমিতে রোগ-বালায় এর কারণে ফসলের ক্ষতির বিষয়ে একমত বলছেন চাষী ও কৃষি বিভাগ। আর ফলন বিপর্যয়ের দোষ চাপাচ্ছেন একে অপরের ঘাড়ে। প্রায় অর্ধেক জমির ফলন বিপর্যয় হলেও কৃষি বিভাগ বলছেন মাত্র ১’শ ৫০ হেক্টর আখ জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে।

সরজমিনে কৃষক ও চাষীদের কাছ থেকে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পুঠিমারী, পিয়ালিমারী বিলসহ অন্যান্য মাঠে হাজার হাজার একরের এই পুরো মাঠে রোগে আক্রান্ত হয়ে আখের জমির ফলন বিপর্যয় ঘটলেও দেখা মিলেনি কৃষি অফিসারদের। খোঁজও নেয়নি কৃষকদের বা ব্যবসায়ীদের কৃষি বিভাগ। ফলন বিপর্যয়ের কারণে কৃষকদের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে।

জেলায় এবছর আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। সদর ও গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রায় শতাধিক হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। তবে এই ২ উপজেলার আখ মাড়ায় হয় না, এগুলো হাটে-বাজারে বিক্রি হয়। এবছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে আখের আগা কাটা রোগসহ নানা রোগ বালায় এর কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব হবে না।

কৃষক ও চাষী মাসুদ, সালাম, শামীমসহ অনেকেই বলছেন, এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘানি গুড় হয়। কিন্তু এবছর এক বিঘা জমিতে গুড় হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৫ ঘানি। এক বিঘা জমিতে যেখানে ১৮ থেকে ২০ মন গুড় হওয়ার কথা, সেখানে হচ্ছে ৪ থেকে ৫মন। এক বিঘা জমির আখের মূল্য ১৮ হাজার, ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।

শত শত বিঘা জমির আখের জমিতে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক বিঘা জমিতে চাষী পাচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকা, কোন জমি একেবারেই নষ্ট। অনেক ব্যবসায়ী অন্যের জমির আখ ক্রয় করে মাড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারাও পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ফলন অনুমান করে আখের জমি ক্রয় করে উঠছেনা কেনা দামও। আলাদা ও উন্নত জাতের আখ চাষের আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষকরা। 

কৃষকরা আরও জানায়, এক বিঘা জমিতে বীজ লাগে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এছাড়া এক বিঘা জমিতে একবছরে খরচ হয় সবমিলিয়ে ১০ হাজার টাকা। প্রথম বছর বেশী খরচ হলেও আখের জমিতে ফলন পাওয়া যায় ২ থেকে ৩ বছর। কিন্তু এবছর আখের জমিতে রোগের প্রকোপের কারণে কৃষকের খরচের টাকায় উঠছে না। ফলে হতাশায় এ অঞ্চলের আখ চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস.এম আমিনুজ্জামান জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার পুঠিমারী, পিয়ালিমারী বিলসহ অন্যান্য মাঠে আখের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিলো ৭ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে। এবছর আখের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে আখের আগা কাটা রোগসহ নানা রোগ বালায় এর কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া সম্ভব হবে না। আখ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে আলু, রসুন, পিয়াজ ও ধনিয়া চাষ করার কারণে আখের জমিতে লাল পচা রোগ, মাজরা পোকার আক্রমন ও উইল্ট রোগের প্রভাব এবং রোগ বালাই এর প্রকোপ বেশী হয়। বিশেষ করে আখের জমিতে রসুন চাষের কারণেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

এছাড়া নিচু জমি হওয়ায় পানি জমে থাকার কারণে পচন রোগে আক্রান্ত হয়। একই জমিতে ৩ বারের অধিক আখ চাষ না করার জন্য এবং ইশ্বরদী ৫৪, ২৭, ২৮ জাতসহ পুরোনো জাতের আখের চাষ না করে ইশ্বরদী ৩৯, ৪২, ৪৩ ও ৪৪ জাতের উন্নত মানের আখের চাষ করার জন্য চাষীদের পরামর্শ দেন তিনি। উন্নত জাতের আখ চাষ করলে যেমন রোগ বালায় প্রতিরোধ হবে, পাশাপাশি জমিতে ফলনও বৃদ্ধি পাবে। চাষীদের আখ চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সময়মত ও সঠিক পরামর্শ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন রোগ-বালায় দমনে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ লেখা লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। 

Bootstrap Image Preview