Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিশ্বে ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১১০টি ভ্রমণ করলেন বাংলাদেশি যে নারী

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৯ PM
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: ইন্টারনেট


নাজমুন নাহার। বিশ্বের একশোটিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশি এই নারী। ইতোমধ্যে ১১০টি দেশে নিজের উদ্যোগে সফর করেছেন এই নারী। তবে তার সফরের সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের পতাকাও।

তিনিই বাংলাদেশের প্রথম কোন নারী যিনি বিশ্বের এতোগুলো দেশ সফর করেছেন। ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠার জন্যে মিজ নাহার তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন- বই, বাবা ও তার দাদা।

তিনি জানান, শৈশবে বই পড়তে পড়তেই তার ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ভ্রমণ কাহিনীসহ নানা বই পড়ার সময় তার মনে হতো তিনি যেন সেখানে চলে গেছেন। ওই গল্পের ভেতরে হারিয়ে যেতেন তিনি নিজেও।

সারা বিশ্বকে দেখার ব্যাপারে বাবা আমাকে উৎসাহিত করতেন। আমার দাদা উনিশ শতকের শুরুর দিকে বিভিন্ন আরব দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই দু'জন মানুষকে দেখে আমি নিজেও ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

নাজমুন নাহার জানান, বিশ্বের সব দেশ দেখা তার একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে তিনি ধীরে ধীরে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এজন্যে তাকে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

তিনি মনে করেন, যে মানুষ উচ্ছাসপ্রবণ এবং যার ভেতরে স্বপ্ন থাকে তাকে কেউ ওই স্বপ্ন পূরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না।

তিনি আরও জানান, "আমি সবসময় পজিটিভ চিন্তা করি। না বলে কোন শব্দ আমার কাছে নেই। আমি বিশ্বাস করি যে চেষ্টা করলে সবকিছুই করা সম্ভব”।

তার এই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ ছিল ভারত। সেখানে বিশ্বের ৮০টি দেশের ছেলেমেয়ের এক সমাবেশে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

তিনি বলেন,ওই ঘটনা আমার ভেতরে একটা শিহরণ তৈরি করে। ওই শিহরণই আমাকে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর ১১০টি দেশে নিয়ে গেছে। এবং এই শিহরণ নিয়েই আমি পৃথিবীর বাকি দেশগুলোতে যাবো।

১৭ বছর ধরে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু এজন্যে তো সময় এবং অর্থ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এসব তিনি কিভাবে ম্যানেজ করেন?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম কয়েকটি দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে।

তারপর তিনি বৃত্তি নিয়ে চলে যান সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পড়তে পড়তে স্বপ্ন দেখতে থাকেন আরো দেশ ভ্রমণের জন্যে। সেসময় তিনি বিশ্ব-ভ্রমণের লক্ষ্যে অর্থ সঞ্চয়ের জন্যে প্রচুর কাজও করতেন।

"আমি জানতাম কষ্ট করে উপার্জন না করলে আমি ভ্রমণ করতে পারবো না। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কোন কোন দিন আছে আমি ১৭/১৮ ঘণ্টা ধরেও কাজ করেছি। কারণ আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করা। ইউরোপে থাকার কারণেও আমার এই ভ্রমণে কিছুটা সুবিধা হয়েছে।"

একজন নারী এবং বিশেষ করে বাংলাদেশী নারী হিসেবে এই ভ্রমণের সময় তার কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মিজ নাহার বলেন, প্রথমত এটা মানসিক সংগ্রাম। এই সংগ্রামে জয়ী হতে পারলে যেকোনো জিনিসই সহজ হয়ে যায়।

নাহার বলেন, "নিজের ভেতরে আমি সাহস রাখি। এই সাহসের জন্যেই আমার কোন অসুবিধা হয়নি। ছেলেমেয়েদের সাথে আমি ইয়ুথ হস্টেলেও ছিলাম। কিন্তু কখনোই কোন অসুবিধা হয়নি। নিজেকে কীভাবে আরেকজনের সামনে তুলে ধরবো সেটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

পৃথিবীর যেখানেই যাচ্ছেন নাজমুন নাহার, সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পতাকা। লাল সবুজ এই পতাকা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় লোকজনের। জাম্বিয়ায় সরকারের একজন গভর্নর এজন্যে তাকে 'ফ্ল্যাগ গার্ল' বলেও খেতাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, পতাকা তার কাছে দেশপ্রেমের একটি চিহ্ন, আবেগ, ভালোবাসা। "এই পতাকার মাঝে লুকিয়ে আছে ১৬ কোটি মানুষের ভালবাসা। আছে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো বহু শহীদের রক্ত। তাদের কারণে আমরা এই পতাকা পেয়েছি।"

"আমরা তো স্ব স্ব ক্ষেত্রে দেশের জন্যে কিছু করতে পারি। আমি ভ্রমণ করছি, পৃথিবী দেখছি। কিন্তু আমার দেশ আমার সাথে যাচ্ছে এই পতাকার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে আমি পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছি শান্তির বার্তা- আমরা একই পরিবারের মানুষ, একই পৃথিবীর মানুষ, ধর্ম বর্ণ, জাতি আমি যে-ই হই না কেন শেষ পর্যন্ত আমরা তো সবাই বসবাস করছি একই আকাশের নিচে।"

কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে এই ১১০টি দেশের মানুষেরা তাকে কী বলেছেন? মিজ নাহার বলেন, অনেক দেশের মানুষেরই বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।

"আফ্রিকার যেখানেই আমি বাংলাদেশের পতাকা ধরেছি, সেখানেই মানুষ দৌড়ে এসে বলেছে, আমরা বাংলাদেশকে খুব পছন্দ করি। তোমাদের ক্রিকেট আমাদের খুব পছন্দের," বলেন তিনি।

নাহার জানান, উরুগুয়েতে একজন নারী তাকে ছুঁয়েও দেখেছেন, কারণ তিনি নাকি এই প্রথম বাংলাদেশের একজন মানুষকে দেখেছেন।

ভ্রমণের সময় তোর অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলেও তিনি জানান। কোন কোন জায়গায় তিনি ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তিনি জানান, উগান্ডা থেকে রোয়ান্ডায় যাওয়ার পথে তার ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

তিনি রওনা দিয়েছিলেন বিকালের বাসে। পথে যখন মধ্যরাত তখন হঠাৎ করে প্রচণ্ড জোরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। রাস্তার দু'পাশে বড় বড় জঙ্গল। সেখানে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাসটা পড়ে যায়। খুব কাছেই তখন বন্যপ্রাণীর ডাক শোনা যাচ্ছিল।

"বাসে আমি ছাড়া আর কোন পর্যটক ছিল না। ওখানে স্থানীয় যেসব ছেলেমেয়ে ছিল তারা আমাকে সাহস দেয়। কিন্তু এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছিল, মনে হয়েছিল যে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছি।"এভাবে তিনবার সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি তবুও তিনি দমে যাননি সেসব বাঁধায়।

জাতিসংঘের স্বীকৃত দেশ আছে ১৯৩টি। তার মধ্যে ১১০টি দেশে তিনি সফর করে ফেলেছেন। এখনও যেসব দেশ বাকি রয়েছে, সেগুলোও দেখে ফেলতে চান যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব।

Bootstrap Image Preview