Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

অমার্জনীয় বর্বরতাকে সমর্থনের চেষ্টা করছেন সু চি: মাহাথির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৬ AM
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৬ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো বর্বর নির্যাতনকে মিয়ানমারের সরকার প্রধান অং সান সু চি সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

গতকাল মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের এক সম্মেলনের সাইডলাইনে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। এদিকে নৈতিক অবস্থান থেকে লজ্জাজনকভাবে সরে যাওয়ার কারণে সু চি’কে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। খবর:রয়টার্স ও বিবিসি’র।

সিঙ্গাপুরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার ও অং সান সু চি’র ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, সু চি অমার্জনীয় বিষয়কে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে তারা মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের হত্যা করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত সহিংসতা ও নিধনযজ্ঞ চালায়। এই নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। সে সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে নিরব ভূমিকা পালন করেছেন সু চি।

সম্মাননা কেড়ে নিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বর নির্যাতনে নিরব ভূমিকা ও এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে লজ্জাজনকভাবে সরে যাওয়ার কারণে সু চি’কে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি সোমবার এক ঘোষণায় এ কথা জানিয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সু চি’র ভূমিকার জন্য এর আগেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সু চি’কে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো অ্যামনেস্টি। ২০০৯ সালে সু চি’কে ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনশেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দেয় সংস্থাটি।

গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সু চি’র শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। অ্যামনেস্টির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে সু চি’কে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, আট বছর আগে গৃহবন্দী থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন। সংস্থার একজন দূত হিসেবে সু চি’র কাছে প্রত্যাশা ছিল, শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। কারণ আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যামনেস্টি আপনাকে দেওয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স’ সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।

সংস্থাটি আরো বলেছে, সু চি’র নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজার হাজার মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে স্টেট কাউন্সেলর সু চি ও তার দপ্তর তাদেরকে রক্ষা করেছেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষে সু চি’র দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। সংস্থাটি আরো বলেছে, সু চি সহায়তা না করলেও মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে অ্যামনেস্টির লড়াই অব্যাহত থাকবে।

Bootstrap Image Preview