মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কে বাংলাদেশের কর্মীরা। মালয়েশিয়ায় চলতি বছরে ৪১ হাজার ১৮ অবৈধ অভিবাসী আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা বারনামা সূত্রে জানা গেছে, আটকাদেশের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯০টি স্থান পরিদর্শনসহ ১২ হাজার ৬৫৯টি অভিযানে এসব অভিবাসীদের আটক করা হয়।
আটকদের মধ্যে ১৩ হাজার ৬১৪ জন ইন্দোনেশিয়ার, ৮ হাজার ৭৪৮ বাংলাদেশি, ৪ হাজার ৬৮ মিয়ানমার, ৩ হাজার ৫৪৯ ফিলিপাইন, ২ হাজার ৭৯২ থাইল্যান্ড এবং ৮ হাজার ২৪৮ অন্যান্য দেশের নাগরিক।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক লাখের যথাযথ কাগজপত্র সঙ্গে নেই।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী জানান, ‘আমরা প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু এখনও এমন নিয়োগকর্তারা রয়েছেন যারা হতাশভাবে কাজ করে এবং অবৈধ অভিবাসীদের রক্ষা করে এবং এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৬ জন নিয়োগকর্তাকে আটক করা হয়েছে যাদের অধিকাংশই অভিযুক্ত হয়েছে।’
সম্প্রতি দেশটির তানাহা রাতা টার্মিনাল ফ্রিসিয়া ক্যামেরন হাইল্যান্ডস ইমিগ্রেশন অফিসের কার্যপরিবেশের পর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তফার আলী।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতো সেরি মোস্তাফার আলী বলেন, মালয়েশিয়াতে নিয়োগকারী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের অবৈধ শ্রমিকদের জন্য একটি বড় ধরনের সতর্কবার্তা। আমরা যে কোন জায়গায় যে কোনো অবস্থাতেই অভিযান পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছি। যতদিন না এই দেশ থেকে অবৈধ শ্রমিক বিতাড়িত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আটক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী বলেন, সারা দেশে এ অভিযান পরিচালনা করছেন অভিবাসনবিষয়ক কর্মকর্তারা। আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। ওই অভিযানে ৫ হাজার অভিবাসীর মধ্যে ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
মুস্তাফার আলী জানান, ২০১৪ সাল থেকে গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৮ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন।
এর আগে অভিবাসীদের আত্মসমর্পণের জন্য ২০১৪ সালে থ্রি প্লাস ওয়ান কর্মসূচি হাতে নেয় মালয়েশিয়া সরকার। ওই কর্মসূচির আওতায় নামমাত্র জরিমানা দিয়ে সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে দেশে ফেরত যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে ৩০ আগস্ট সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা শেষ হয়।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল পারমিট ইস্যুতে করারোপ করা হলেও থেমে নেই দালালরা। কাউকে (টিপি) ট্রাভেল পাসের জন্য অর্থ দিয়ে থাকলে এবং প্রতারণার স্বীকার হলে তথ্য ও প্রমানাদিসহ মিশনে যোগাযোগ করতে বলা হলেও যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ট্রাভেল পারমিট করে দেয়ার নামে দালালি অফিস। ওইসব অফিস ফেইসবুক আইডি খুলে ওয়ালে ট্রাভেল পারমিট করে দেয়ার নামে সাধারন শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার রিঙ্গিত।
এতে অবৈধ বাংলাদেশিরা ট্রাভেল পাশ পেতে পদে পদে হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে এসব জালিয়াতি আর অপপ্রচারে পুড়ছে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের কপাল! আর এ জালিয়াতির কারণে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল পাস ইস্যুতে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে,একটি সংঘবদ্ধ চক্র মালয়েশিয়া এবং কক্সবাজার এলাকায় এইসকল দুই নম্বরি কাজে সক্রিয়। এদের কথার বাইরে গেলে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে নানান অপপ্রচার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেল্প লাইন ফর বাংলাদেশি নামে একটি ফেইসবুক পেজ, মালয়েশিয়ায় চাকরির খবর, জব্স ইন মালয়েশিয়া ফর ফরিনার, ফায়সাল মাহমুদ অপূর্ব ও মোহাম্মদ শরিফুল আলম নামের ফেইসবুক আইডিতে দেখা গেছে, ট্রাভেল পাস করে দেয়ার নামে প্যাকেজ প্রোগ্রাম চালু করেছে। ১৬ শ থেকে শুরু করে আড়াই হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত তারা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
প্রতিদিন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা কারণে প্রতারনার শিকারে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা ট্রাভেল পাশ নিতে ভোরবেলা থেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে ভীড় জমাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কাংঙ্খিত ট্রাভেল পাশ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে বিকেলে আবার পুলিশী গ্রেফতার এড়িয়ে কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই আউট পাসের জন্য ৪৪ রিংগিত ব্যাংক ড্রাফট কেটে সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাধি নিয়ে সেকশনে জমা দিয়েও কোন সাড়া পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) সায়েদুল ইসলাম মুকুল এ প্রতিবেদককে জানান, “ট্রাভেল পাস দেয়া হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে। যাতে ইস্যুকৃত ট্রাভেল পাসের অপব্যবহার না করা হয়। এ ছাড়া রয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা। অনেক সময় দেখা গেছে টেকনাফের লোক সেজে ট্রাভেল পাস নিতে আসে।