Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে `রুম টু রিডের' অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:৫১ PM
আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৩:৫১ PM

bdmorning Image Preview


মেয়ে শিশুদের বৃহৎ পরিসরে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশীজনের অবদান চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার(২৫ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘রুম টু রিড বাংলাদেশ’এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‘কন্যা শিশুকে প্রাণ না: দক্ষ কন্যা শক্তি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস- ২০১৮ উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রার ৪ ও ৫ নম্বর-এ অন্তর্ভুক্ত গুণগত শিক্ষা এবং জেন্ডার সমতা অর্জনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এছাড়া নারী অধিকার ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে নিজেদের ভাবনা ব্যক্ত করে সংস্থার উপকারভোগী মেয়েশিশু শিক্ষার্থীরা।

এ সময় মেয়েশিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো নিয়ে সরাসরি অতিথিদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সকল মেয়ে ও ছেলে শিশুর অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক এবং গুণগত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ তথা এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিয়ে কথা বলেন উপস্থিত অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে ‘রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রুম টু রিড বাংলাদেশ কাজ করছে এবং এ লক্ষ্যে জেন্ডার সমতা আনয়ন এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীবন দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে যাচ্ছে। রুম টু রিড বাংলাদেশ সরকারের নারী উন্নয়নেরসকল উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং তার সাথে সহযোগি হতে চায়।’

রুম টু রিডের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে রুম টু রিড সহায়তা প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাশের হার ছিল প্রায় ৯৪%। যেখানে জাতীয় পাশের হার ৬৭%। রুম টু রিড বর্তমানে ঢাকা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং কক্সবাজার জেলায় শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি বলেন, মেয়ে শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ৪ হাজার ৮৮০ কিশোরী ক্লাব স্থাপন করেছে। যার মূল লক্ষ্য হলো দেহ-মনে শিশু-কিশোরীর বিকাশ সাধন। খেলাধুলায় আমাদের মেয়েরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুমিকা রাখছে বিশেষ করে ক্রিকেট, ফুটবল এবং ভলিবলে সাফল্য দেখিয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই মেয়ে খেলোয়ারদেও ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন বলে  উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, মেয়েদের আত্মরক্ষার্থে আমরা ক্যারাটে শেখার ব্যবস্থা করেছি এবংবিভিন্ন ধরনের এ্যাপস্ তৈরি করেছি যাতে মেয়েরা কোন সমস্যায় পড়লে সে বাটনে চাপ দিয়েই তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে  জানাতে পারে এবং  এর ফলে তাকে সুরক্ষা দিতে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের পাশপাশি বেসরকারী সংস্থা রুম টু রিডের চলমান কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অধিদপ্তরের  মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কাজী রওশন আক্তার বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে নারী-পুরুষে কোনো পার্থক্য থাকবে না। জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানে-সমান। আমাদের অধিদপ্তর নারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধকমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন এবং নারীদের বাল্যবিবাহ রোধে এই ধরণের আয়বর্ধকমূলক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। ‘বাল্যবিবাহ রোধ করতে, আওয়াজ তোল ঘরেঘরে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মোহাম্মদ শামছুল হুদা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ৬০% এর উপরে আমাদের তরুণ শক্তি। মাধ্যমিক স্কুলে ৫৩% মেয়ে শিশু পড়াশুনা করছে এবং আমরা আশা করছি কমপক্ষে ৩৩% মেয়ে শিশু ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখবে। তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে মেয়ে বান্ধব পরিবেশ তৈরী করার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিভিন্ন অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষানুরাগী, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সংস্থার কর্মএলাকা ঢাকার ১৩টি বিদ্যালয়ের ৬৫০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার মেয়ে শিশুদের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, রুম টু রিড বিশ্বের ১৬টি দেশে শিশুদের শিক্ষা সহায়তায় কাজ করে আসছে। সংস্থাটি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ‘মানসম্মত সাক্ষরতা’ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েশিশুদের ‘শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রম’ পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ২৭টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০০০ মেয়েশিশুকে শিক্ষা সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview