Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কেওড়া চাষে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা

হরিণঘাটা ও লালদিয়া বন

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৫৪ PM
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পূর্বে বিষখালী ও পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী ও সাগরের মোহনা ঘরে উঠছে হরিণঘাটা ও লালদিয়া বন। সুন্দরবনের হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বন পার হয়ে গেলেই চোখে পরে লালদিয়া। এ বনের পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। দেখলে সবারই নজর কাড়বে। এছাড়াও রয়েছে সবুজে ভরা কেওড়া গাছ। এ গাছের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এ বনাঞ্চলের সবচেয়ে উচুঁ গাছের মধ্যে কেওড়া গাছ অন্যতম। এ গাছ উপকূলীয় এলাকার পরিবেশে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে থাকে।

হরিণঘাটাসহ বিষখালী ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী বনাঞ্চলের কয়েক হাজার বানর ও হরিণ কেওড়া গাছের পাতা ও ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অতিপরিচিত একটি ফল। এ ফলটি টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে অনেক পরিবার আয় ও করেছে। কেওড়ার চাটনি, টক আর ডাল রান্না করে রসনা মেটাচ্ছে অনেকেই। সরকারিভাবে এ ফলটি বিক্রি অবৈধ হলেও অনেকে গোপনে এ পেশায় অবৈধ ভাবে ডুকে কেওড়া পাচার করেছে। তবে এটি বাণিজ্যিক হিসেবে সরকার বৈধ করলে শুধু কেওড়া গাছ নয়, কেওড়া ফলকে ঘিরেও নতুন শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কেওড়া ফল বিক্রি সরকারিভাবে বৈধ না হলেও কিছু লোভী ব্যবসায়ীরা এ ফলটি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। অবশ্য অনেক দরিদ্র পরিবার এ ফল আহরণ ও বিক্রি করে সচ্ছল হয়েছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাথরঘাটা থেকে প্রচুর ফল বিক্রি করা হয়ে থাকে।

কেওড়া গাছ সাধারণ বৃক্ষ প্রজাতির হয়ে থাকে। গাছের শ্বাসমূল মাটির উপরে উঠে আসে। প্রচুর ফল হয় গাছে। কেওড়া ফল দেখতে অনেকটা ডুমুরের মতো। এ গুলো বানর ও হরিণের পছন্দের খাদ্য। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংশাল অংশটুকু স্বাদে টক। ভিতরে বড় বিচি থাকে। টক স্বাদের এই ফলটি বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশের দক্ষিঞ্চলের মানুষের জনপ্রিয় খাদ্য। কাঁচা ফল লবণ সহকারে খাওয়া যায়। এই ফল থেকে কেওড়াজল তৈরি করা হয় যা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়। কেওড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। ফলটির রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি (ফ্যাট) কমায়। এতে কিছু এনজাইম আছে, যা শরীরের হজম শক্তি কমায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় এ ফল। কখনো কখনো সুবিধা বুঝে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন, সুন্দরবন এলাকার হরিনঘাটা ও লালদিয়া থেকে ব্যাপক হারে কেওড়া ফল সংগ্রহ করে বিক্রি অব্যাহত থাকলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনায়ন ব্যাহত হবে। কারণ, কেওড়া ফল পুষ্ঠ হওয়ার একপর্যায়ে আপনা থেকেই তা ঝরে পড়ে। এরপর জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে সেই ফল চারা উৎপাদনে সক্ষম হয়ে প্রাকৃতিকভাবে নতুন বনায়ন সৃষ্টি করে। 

এ বিষয় বনবিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রানী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এখন পর্যন্ত কেওড়া গাছ ও ফল পাচার-বিক্রি আইনত দন্ডনীয়। সরকার চাইলে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।

Bootstrap Image Preview