Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজনৈতিক মহাসমাবেশ ঢাকার বাইরে নয় কেন?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:০৮ PM
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৪০ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল


ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় 'ইছালে ছাওয়াব' নামে কয়েক দিনব্যাপী ইসলামী জলসার আয়োজন চলতো। এই ইছালে ছাওয়াবকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বড় বাজার বসতো। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেধে লোক আসতো। অন্যান্য জেলা থেকেও এই মানুষের আগমন ঘটতো। ছোটবেলায় ওই লোক সমাগমের মধ্যে অল্প পথ যেতেই হিমশিম খেতে হতো। লাইন ধরে ভিড়ের মধ্যে একে অপরের হাত ধরে আমরা ইছালে ছাওয়াবে যেতাম। হঠাৎ করে রাস্তাঘাট আর এলাকায় মানুষের সমাগম বেড়ে যেতো। তখন পর্যন্ত এত লোক  দেখার সৌভাগ্য হয়ে ছিল কেবল ইছালে ছাওয়াবকে কেন্দ্র করে। শুরুতে এই কথা বলার কারণ হলো ওই সময়ের মতো লোক সমাগম দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে ঢাকা শহরে এসে। আর এখন পেশাগত কারণে সেই সৌভাগ্য আরও বেশি হয়। লোক সমাগমের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ছোটবেলায় ইছালে ছাওয়াবে যাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়।

রাজধানীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে লোক সমাগম বেড়ে যায়।এর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসমাবেশসহ দলগুলোর বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি। উচ্চ শিক্ষা, চিকিৎসাসহ উন্নত সেবার জন্য ঢাকায় আসতে হয় আমাদের। আবার নদী ভাঙনে জমি জায়গা হারিয়ে, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য, জীবিকার তাগিদে এবং উন্নত জীবনের আশায়ও প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটছে রাজধানীমুখে। রাজধানীতে ভিড় করা এই মানুষের সংখ্য এখন দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ(বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য)। ২০০৫ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যাটা ছিল ৭২ লাখ। অর্থাৎ গত এক যুগে রাজধানীতে মানুষ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।

এই জনসংখ্যার চাপ পড়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থায়, আবাসনের ওপর। প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে বের হলেই আমাদের এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপে নাকাল হতে হয়।গণপরিবহনে প্রতিনিয়ত ঝুলে ঝুলে অফিস বা কর্মস্থলে যাতায়াত অথবা রাস্তার দীর্ঘ যানজটে প্রতিদিন নাকাল হতে হয় রাজধানীবাসীর।

তবে তিলোত্তমা এই নগরীতে হঠাৎ করেই মাঝে মাঝে বাড়তি জনসংখ্যা দেখা যায়। তখন প্রতিদিনকার দুর্ভোগ সহ্য করা মানুষকে পড়তে হয় আরও বাড়তি ঝামেলায়।রাজনৈতিক দলগুলোর রথী-মহারথীরা যেহেতু ঢাকায় থাকেন। তাই দলের মহাসমাবেশ ও জেলা উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের গ্রাম-গঞ্জ থেকে ঢাকায় এনে মহাসমাবেশের আয়োজন চলে মাঝে মধ্যেই। সাথে আছে দলগুলোর বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন।

এসব মহাসমাবেশ আর কর্মসূচিতে দলগুলোর লক্ষ্যই থাকে সর্ব্বোচ সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ থাকে লোক সমাগম নিয়ে রাজধানীতে আগমনের। অনেক আগ থেকেই বড় প্রস্তুতি নিয়ে চলে লোক সমাগম নিশ্চিত করার ব্যবস্থা।প্রতিটি সমাবেশ ও কর্মসূচিতে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি টার্গেট থাকে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও সুযোগ হয় ঢাকায় আসার।তৃণমূলের পাতি নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে আগ থেকেই সেজেগুজে অপেক্ষা করে ঢাকায় আসার জন্য। আর যেহেতু লোক সমাগম থাকে এসব সমাবেশের একটা উদ্দেশ্যে সেই কারণে নেতাকর্মীরা লোক সমাগম করার ব্যবস্থা করেন। কোন নেতা কত বেশি লোক নিয়ে আসতে পারেন তার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়ে যায়। যে ছেলে হয়তো কোনদিন ঢাকায় আসেনি আসা যাওয়া ফ্রিতে ঢাকায় আসার সাধ মিটিয়ে নিচ্ছে সেও। কখনও কখনও হয়তো কিছু টাকাও পেয়ে থাকেন। এমনকি যারা রাজনীতি করে না তারাও লোক সমাগমের ব্যানারে যোগ দিতে চলে আসে কিছুটা বাড়তি পাওনায়।

এরপর সমাবেশের আগের দিন গাড়িবহরে সামনে ব্যানার আর স্লোগানে মুখরিত করতে করতে তাদের আবির্ভাব হয় রাজধানীতে। হাতে প্ল্যাকাড আর মুখে স্লোগান নিয়ে বিরাট শো ডাউন চলে রাজপথে। আর এতেই রাজধানীর পথঘাট আটকে যায়।তৈরি হয় যানজট। অনেক সময় রাস্তাঘাট আটকে দিয়েও তাদের নিবিঘ্নে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে দেখা যায়। এদিকে বিশাল যানজটে পড়ে অনেকে হয়তো ঠিক সময়ে অফিসে বা কর্মস্থলে যেতে পারে না। রোগীবহন অ্যাম্বুলেন্সকে আটকে থাকতে হয় যানজটে।

ভুক্তভোগী রাজধানীবাসীরা তখন বাধ্য হয়ে হয়তো বাস থেকে নেমে হেঁটে বা অন্য কোনভাবে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর সময় এসব সমাবেশ মহাসমাবেশ নিয়ে হয়তো নিজের অজান্তেই আওড়াতে থাকেন এসব মহাসমাবেশ কর্মসূচি কী ঢাকার বাইরে করা যায় না, আর পারি না।অনেকেই হয়তো গালি দিয়েও মনের ক্ষোভ মিটিয়ে থাকেন।

যখন প্রতিনিয়ত রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী যানজট, যখন রাজধানীতে যানজট কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের মহাসমাবেশ ঢাকার বাইরে করা যায় কী না সেটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মহাসমাবেশ বা কর্মসূচি রাজধানীর বাইরের কোন জেলায় করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে করে দলীয় নেতাদের ঢাকার বাইরে যাওয়ার এক ধরনের চর্চা তৈরি হবে। অন্যদিকে মহাসমাবেশে সবাই ঢাক ঢোল বাজিয়ে রাজধানীতে এসে যানজটে তৈরি করতে পারে না।

রাজধানীতে এমনি তেমর বড় জায়গা নাই। সকল মহাসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়। কোন কোন দল আবার নানাবিধ কারণে রাস্তায়ও মহাসমাবেশের আয়োজন করে থাকে। আর এসব মহাসমাবেশে আসা ব্যক্তিদের দিকে তাকালে বুঝা যায় তাদের অনেকে শুধু ঢাকায় আসতে পারছে এই সুযোগে আসছে।স্থানীয় নেতার সাথে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা কৌতূহল নিয়ে ঢাকায় আসে এসব সমাবেশে অংশ নিতে। পেশাগত কারণে কয়েকটা মহাসমাবেশ কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। দেখেছি অনেকে খালি পেয়ে, লুঙ্গি পরে নেতাদের শো ডাউনের বাড়তি জনস্রোতে অংশ নিতে এসেছে। অনেক সমাবেশে আমরা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের দেখি। ইতিমধ্যে সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা জানতেও পেরেছি এসব ছেলেদেরকে টাকার বিনিময়ে এসব মহাসমাবেশে যোগ দিতে নিয়ে আসা হয়।

এসব মহাসমাবেশে আসা লোকদেরকে কাছ দেখে আমার মনে হয়েছে তারা যতটা না মহাসমাবেশে আসে তার চেয়ে বেশি হলো তাদেরকে আনা হয়। তারাও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কখনও কখনও টাকার বিনিময়ে এসব কর্মসূচিতে যোগ দেয়। যাইহোক এটা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। রাজনীতিবিদরা যেহেতু জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। তারা রাজধানীকে সুন্দর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। উদ্যোগ নেন যানজটমুক্ত রাজধানী গড়ে মানুষের বসবাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে। সে কারণে এখনই হয়তো সময় এসব রাজনৈতিক মহাসমাবেশ ঢাকার বাইরে বা ঢাকার নিকটবর্তীও কোন জায়গায় করার তাতে কিছুটা হলেও রাজধানীতে মানুষের চাপ কমবে।এতে কিছুটা স্বস্বিতে চলাচল করতে পারবে রাজধানীবাসী। এতে জনগণকে খুশি রাখা যাবে সহজেই। আর জনগণকে খুশি রাখাটাই মনে হয় রাজনীতিবিদদের বড় কাজ।

Bootstrap Image Preview