Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তারেক দেশে ফিরলে আপিল’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২৯ PM
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দেয়া রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাবেন। তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। আজ বুধবার এ মামলায় রায় ঘোষণা পরবর্তী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া এ কথা বলেন।

এর আগে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আহত এবং নিহতদের পরিবারের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। এ রায়ে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। তারেক রহমানের যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না সে বিষয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার(১১ অক্টোবর) সারাদেশের জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

রায় পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে ২১ অগাস্ট হামলার মামলার রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২১ আগস্ট রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই রায়ে বিএনপি নেতারা ন্যায় বিচার পাননি। সে কারণে এই রায়কে প্রত্যাখান করা হলো।

ফখরুল বলেন, রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের দলীয় কর্মসূচি থাকবে, রাজনৈতিক কর্মসূচিও থাকবে ও আইনি তৎপরতাও থাকবে। বলে জানান।

এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে দেশে একজন প্রধান বিচারপতি ন্যায়বিচার পান না, সেখানে অন্য নাগরিকের কী হল, সেটা সৃষ্টিকর্তায় মালুম।এ দেশে কোনো নাগরিকের সুবিচার পাওয়ার অধিকার নেই।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় পলাতক ১৮ আসামি হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, ডিএমপির সাবেক ডিসি(পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, হুজি সদস্য মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন, খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন ওরফে দোলোয়ার হোসেন ওরফে জুবায়ের, মুফতি শফিকুররহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহম্মদ বাবু।

অন্যদিকে কারাগারে থাকা ৩১ আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুসসালাম পিন্টু, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থারসাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক পুলিশমহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, পুলিশ কর্মকর্তা শহুদুল হক, খোদা বক্স চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেকএএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গি সংগঠন হুজির সদস্যআবু বক্কর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ ভাটওরফে ইউসুফ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহওরফে মহিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ড. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীরআলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফেআবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

এর আগে আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্যনেয়া হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমানপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভিরহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।

ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেথানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্তবিভাগে (সিআইডি)।

২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তেরদায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।

তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনেদুটি অভিযোগপত্র দেন। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।

ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকিআসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১ জন।

Bootstrap Image Preview