ইসলাম মনে করে, এই পৃথিবীতে মানুষের পরই প্রাণিজগতের স্থান। প্রাণিজগতকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআন বলছে : ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮) সে হিসেবে বলা যায়, কুকুর আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। নিম্নে কুকুর সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো—
১৮. (তাদের দেখলে) তুমি মনে করতে ওরা জাগ্রত, কিন্তু ওরা ছিল ঘুমন্ত। আমি ওদের পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডানে ও বামে। ওদের (পাহারাদার) কুকুর ছিল—সামনের পা দুটি গুহার প্রবেশমুখে প্রসারিত করে। তাদের দিকে তাকালে তুমি পেছন ফিরে পালিয়ে যেতে এবং তাদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে। [সুরা : কাহফ, আয়াত : ১৮ (দ্বিতীয় পর্ব)]
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে আসহাবে কাহফের নিদ্রাকালীন একটি অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গুহায় আশ্রয় নেওয়া যুবকরা দীর্ঘ নিদ্রায় এমনভাবে ছিল যে দর্শক তাদের জাগ্রত মনে করত। এত দীর্ঘকাল নিদ্রায় থাকা সত্ত্বেও তাদের দেহে নিদ্রার চিহ্নমাত্র ছিল না। আলোচ্য আয়াতে আসহাবে কাহফের কুকুরের প্রসঙ্গও আনা হয়েছে। ওই কুকুর তাদের প্রহরায় ছিল। প্রসঙ্গক্রমে এখানে কুকুর সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা উল্লেখ করা হলো—
১. শিকারের উদ্দেশ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : খ. ১৮, পৃ. ২৬৪/ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : খ. ৪, পৃ. ২৪২)
২. শখ করে ঘরে কুকুর রাখা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়।’ (মুসলিম : হাদিস ১৫৭৫; তিরমিজি : হাদিস ১৪৮৭)
অন্য হাদিসে আছে, ‘এক কিরাত হলো, উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিস : ৪৬৫০)
৩. হানাফি মাজহাব মতে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তাই কুকুর কারো শরীর বা কাপড় স্পর্শ করলে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। কুকুর মুখ দিয়ে কারো জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায়, তবে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে; অন্যথায় নাপাক হবে না। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/১০১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ১/২০৮)
৪. ইসলামসহ আসমানি সব ধর্ম মতে কুকুরের গোশত খাওয়া হারাম।
৫. শিকারির জন্য রাখা কুকুর, পাহারার জন্য রাখা কুকুর মেরে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম বা অবৈধ। পাগলা কুকুর, কষ্টদায়ক কুকুর মেরে ফেলা সব আলেমের মতে বৈধ। সাধারণ অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা, মেরে ফেলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। (সূত্র : কুয়েতভিত্তিক ইসলামী বিশ্বকোষ ‘আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা’ : খ. ৩৫, পৃ. ১৩২-১৩৩)
৬. সম্ভব হলে কুকুরকে খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, কুকুর কোথাও পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা ইসলামের দৃষ্টিতে সওয়াবের কাজ। বিশুদ্ধ হাদিসে কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দান করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবার এক পিপাসাকাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে নিজের পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৭)