Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:৫০ PM
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:০৩ PM

bdmorning Image Preview


কথায় আছে মানুষ অভ্যাসের দাস। আর অভ্যাস পরিবর্তন করা, সেতো বিশাল ব্যাপার। দু-একদিনে তোড়জোড় করে কি আর অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব। অভ্যাস অনেকটা কাঠালের আঠার মত। কাঠালের আঠা যেমন লাগলে আর ছাড়ে না। তেমনি অভ্যাস নামের বদঅভ্যাসও কোনোভাবে পিছু ছাড়ে না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মানুষের রাস্তাঘাটের চলাচলে কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছিল। তবে আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতে ফের হারাতে বসেছে শৃঙ্খলা। মানুষ আগের মতো ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছে।

আজ সকালে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলত্বরে পথচারীদের শৃঙ্খলাবিহীন রাস্তা পারাপারের এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সপ্তাহখানেক আগেও এ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউটের সমন্বিত চেষ্টায় রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেই কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর থেকে আবার পথচারী হেয়ালিপনা করে সময় বাঁচাতে গিয়ে অবাদে ফুটওভার ব্রীজের নীচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন।

মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন নাসরিন বেগম। সামনে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও ব্যবহারের কোনো বালাই নেই। মেয়ের হাত ধরে তড়িঘড়ি করে ঝুঁকি নিয়ে পার হলেন রাস্তা। ফুটওভার ব্রিজ থাকতেও কেনো তিনি নীচ দিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলেন? এমন প্রশ্ন ছুড়তেই আতংকিত স্বরে নাসরিন বেগমের উত্তর দিলেন, আসলে প্রতিদিনই ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি। কিন্তু আজ একটু দেরি হয়ে গেছে, মেয়ের ক্লাস আছে। তাই নীচ দিয়েই পার হচ্ছি।

জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য বেশি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল হয়ে গেছে। জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য কখনোই বেশি না। আসলে আমাদের এই অসচেতনার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।

মিরপুর-১০ নম্বরের ফুটওভার ব্রিজের নীচ দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হন একটি প্রাইভেট কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত মিরাজ। কেনো তিনি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার না করে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিরাজ কিছুটা লজ্জিত স্বরে বললেন ভাই অফিসের সময় হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময় পর অফিসে ঢুকলে বেতন কেটে নেওয়া হয় তাই নীচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল থেকে ঠিক সময়ে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের চেষ্টা করবো।

ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে দেখা গেল প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত ষাটোর্ধ রমিজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে। তার কাছে প্রশ্ন করতেই তিনি জানালেন, আমার দেরি হলেও নীচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হই না। কারণ জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য কখনোই বেশি না। আমরা নিজেরাই অসচেতন। আমাদের নিজেদের দোষেই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা রোধ করতে আমাদের অবশ্যই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে।

মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে দায়িত্বরত পুলিশের পল্লবী জোনের এসি (ট্রাফিক) সাইকা ইয়াসমিন বিডিমর্নিংকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের কাজ হচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা যানজট নিয়ন্ত্রনে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না। তারপরও আমরা চেষ্টা করি মানুষকে সচেতন করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বল্প জনবল নিয়ে পথচারী চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। কয়েকদিন আগে স্কাউটের প্রায় ৩৫ জন ছেলেমেয়ে আমাদের সাথে কাজ করেছে পথচারীদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু সবসময়তো তাদের চাইলেই পাওয়া সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও আমাদের সমন্বিত চেষ্টার ফলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তবে পুরোপুরি পরিবর্তনের জন্য মানুষের মধ্যে আত্নসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

এর আগে  ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করে সড়ক পারাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিসিয়ে জেল জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করে সড়ক পার হয়েছেন, তাঁদের জরিমানা করা হয়েছে  বা  কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Bootstrap Image Preview