Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের ন্যায় বিচার কোথায়?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২১ AM
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২১ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা শুধু অপমানের মুখেই পড়ছেন না, তাদেরকে নিবির্চারে আটক করা হচ্ছে। দেশটিতে চলমান অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে এমন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন কাজের খোঁজে যাওয়া বাংলাদেশিরা।

হেনস্থার শিকার একজন হাসান এ বছরের শুরুতে কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তার কাছে সেসবের প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু, অভিবাসন পুলিশের কাছে এগুলোর কোনো মূল্যই নেই।

এ সময় সমস্ত বৈধ দলিলপত্র ইমিগ্রেশন পুলিশকে দেখানোর পরও আমাকে বন্দীশিবিরে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে আমাদেরকে বস্ত্রহীন অবস্থায় রাখা হয় ও কানে ধরে উঠবস করানো হয়।

বন্দীদশা থেকে বেরিয়ে আসতে সে দেশের পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে জানান হাসান।

তিনি আরও জানান, বন্দিশিবিরে বৈধ ও অবৈধ সব ধরনের প্রবাসী শ্রমিককে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল এবং সবার সঙ্গে একইরকম আচরণ করা হয়েছিল।

মালয়েশিয়া বলছে, সেখানে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের ধরে দেশে ফেরত পাঠাতে তারা রোববার থেকে একটি বড় অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কুয়ালামপুর, সেলাংগর, পেনাং সহ শ্রমিকপ্রধান এলাকাগুলোতে এই অভিযান হবে। বলা হচ্ছে, এটাই সাম্প্রতিক সময়ের অবৈধ শ্রমিক ধরার সবচাইতে বড় অভিযান।

মালয়েশিয়া ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা ক্যারাম এশিয়া বলছে, দেশটিতে অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার লোকদের সংখ্যাই বেশি।

তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে , মালেয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশির ভাগই সম্প্রতি বৈধ হবার সুযোগ নিয়েছেন এবং বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।

এদিকে বড়সড় ধরপাকড়ের খবরে আতংকে রয়েছেন সেখানকার অবৈধ শ্রমিকরা।

ভুক্তভোগী হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের ন্যায় বিচার কোথায়?

উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর মালয়শিয়ায় বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটককৃত বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি বলে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা বার্নামার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর মালয়শিয়ায় বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটককৃত বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি বলে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা বার্নামার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী বলেন, ৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার বিদেশি কর্মীকে আটক করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ৬ হাজার বাংলাদেশি। অবৈধ অভিবাসী আটকের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান মুস্তাফার আলী।

বাংলাদেশ সরকারের হিসেব মতে, মালয়েশিয়ায় মোট পাঁচ লাখের মত বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন, যাদের বড় একটি অংশ বৈধতার জন্য সেদেশের সরকারের দেওয়া সুযোগ ইতিমধ্যেই কাজে লাগিয়েছেন। বাকি আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মতো শ্রমিক এই সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়ে এখনো অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন।

তবে এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যারাম এশিয়া বলছে এই সংখ্যা দুলাখের মতো। কুয়ালালামপুরে সংগঠনটির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুনুর রশিদ বিবিসিকে বলেন বৈধতার জন্য কাগজপত্র নিয়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর কাছে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন এই শ্রমিকেরা।

“দেশটিতে এখনও নানা কাজে বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয়। কেন মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে এমন অভিযানে নামছে তা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে হতে পারে দেশটিতে ইদানিং নানাধরনের অপরাধ বাড়ছে আর তাতে অভিবাসীদের প্রায়ই দায়ী করা হয় বলেই হয়ত মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ শ্রমিকদের সংখ্যা কমাতে চাইছে।”

এসব অবৈধ শ্রমিকদের ধরে দেশে পাঠাতে মালয়েশিয়ার সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছে।

রোববার থেকে যাদের আটক করা হবে, তাদের ১৪ দিন সময় দেওয়া হবে বৈধ কাগজ হাজির করতে। তা না পারলে আটকদের জায়গা হবে দেশটির ১২ টি ডিটেনশন সেন্টারে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর মন্টু কুমার বিশ্বাস বলেন ডিটেনশন সেন্টারে যাবার আগ পর্যন্ত তাদের তেমন কিছু করার নেই তবে তার পর থেকে তাদের দেশে ফিরতে সহায়তা করতে পারেন তারা।

“প্রথমে তাদের ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়। দেশে আত্মীয়দের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয় যাতে করে তারা প্লেনের টিকেটের অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।”

দেশটিতে অবৈধভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার এক সমঝোতায় পৌছায়, যার আওতায় বাংলাদেশ সরকার এখন শুধুমাত্র সরকারিভাবেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ করছে।

কিন্তু যারা এখনও অবৈধভাবে সেখানে রয়ে গেছেন তাদের পুনরায় বৈধতার সুযোগ তৈরির চেষ্টা হবে কীনা সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত কোন পদক্ষেপ নেই।

তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বড় ধরপাকড়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।

মালয়েশিয়ার ক্ল্যাংয়ের এমপি চার্লস সান্টিয়াগো অভিবাসীদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছেন। এমপি চার্লস সান্টিয়াগো অভিবাসীদের গ্রেফতার না করে সুষ্টু সমাধানের জন্য সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে ভয়ে ভয়ে দিন কাটানো বাংলাদেশিরা অনেকেই অভিযোগ করছেন, কথিত এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়ায় তারা সে দেশে বৈধ শ্রমিকের স্বীকৃতি পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশি শ্রমিকরা না বুঝে ভুয়া এজেন্টদের হাতে চার থেকে পাঁচ হাজার রিংগিত তুলে দেয়। তাদের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়। কিন্তু টাকা নিয়ে কাজ করে না দেওয়ায় তারা আর বৈধ হতে পারেনি।

Bootstrap Image Preview