বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে সদ্য শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় দেড়শ' ডলার বেড়ে এক হাজার ৭৫২ ডলার হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের এ অংক এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। পুরো এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে এই চূড়ান্ত হিসাব উপস্থাপন করা হয়।
বিবিএস প্রতি বছরই অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ বিভিন্ন খাতের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে থাকে। এ হিসাব করতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের বিভিন্ন উপখাতের ৫ থেকে ৯ মাসের তথ্য ব্যবহার করা হয়। অর্থবছর শেষে গিয়ে বিবিএস চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করে।
বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরের প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড। এর আগে বাংলাদেশে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়নি। প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে আটকে থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে। এর পর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। ওই বছর মাথাপিছু আয় ছিল ১৬১০ ডলার। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদসম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপির আকার দাঁড়াবে ২৭৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৪৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ছে। কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। কমেছে মূল্যস্ম্ফীতি। এদিকে যে যুক্তরাষ্ট্র হাঁচি দিলে বিশ্বে কম্পন হয়ে যায়, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। বাজারে রড-সিমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি নির্মাণ কার্যক্রম বেড়েছে। যে কারণে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের থিঙ্কট্যাঙ্ক ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচেষ্টায় এ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তবে জলাবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা নাও থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এ বছর প্রবৃদ্ধি ৮.২৫ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস দেন মন্ত্রী। এ ছাড়া ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। নির্বাচনের বছর প্রবৃদ্ধি কমবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচন হয়। এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।