Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভুয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ 

রমজান আলী, নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:২১ AM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:২৩ AM

bdmorning Image Preview


নান্দাইলে একটি ‘ভুয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকুরি দেওয়া ও ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার নাম করে ৫ শতাধিক চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

চাকরি প্রত্যাশীরা নিয়োগ না পেয়ে রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংস্থাটির কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ভুয়া এনজিওটির দুই প্রধান কর্মকর্তাকে আটক করে। ভুয়া এনজিওটির নাম ‘অনকুল সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় লিমিটেড’।

আটককৃত কর্মকর্তারা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম পারলেন এবং সম্পাদক মিনি আক্তার।

তাঁদের মধ্যে জহিরুল টাকা নেওয়ার অর্থ অস্বীকার করলেও মিনি আক্তার বলেছেন, তিনি টাকা তুলে জহিরুলকে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদর  ইউনিয়নের ঝালুয়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম পারলেন সম্প্রতি হঠাৎ করেই নান্দাইল পৌর শহরের চারিআনি পাড়া মহল্লায় ‘অনকুল সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় লিমিটেড’ নামের একটি কার্যালয় খুলে বসেন। তিনি বেকার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁর পারিবারিক পটভূমিও উল্লেখযোগ্য নয় বলে জানা গেছে।

বরিবার বিকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভবনের দোতলায় গত সাত মাস ধরে সংস্থাটি কাজ করছে। সেখানে প্রোগ্রাম অফিসার পদে চাকরি করতেন চারিআনি পাড়া মহল্লার লাভলি আক্তার।

লাভলি বলেন, তিনি ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে সংস্থাটিতে যোগদান করেন। গত সাত মাস চাকরি করলেও তাঁকে কোনো সময় দু-তিন হাজার টাকার বেশি বেতন দেওয়া হয় নি।

সংস্থাটির পরিচালক পদ বিধারী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, তারা সমাজসেবা কার্যালয়ের নিবন্ধন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তবে এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ইউপিএও) কোনো অনুমোদন নেন নি।

এছাড়া সমবায় কার্যালয়ের নিবন্ধন আছে দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো অনুমতিপত্রও দেখাতে পারেননি।

এ সময় নান্দাইল, জাহাঙ্গীরপুর ও গাংগাইল ইউনিয়নের ১৫ জন নারী বলেন, সংস্থার কর্মকর্তা মিনি আক্তার তাদের বলেছেন, ‘অনকুল সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় লিমিটেড’ উপজেলায় ‘স্বাস্থ্যসেবা’ কর্মসূচি চালু করবে। ওই কর্মসূচিতে প্রচুর লোক নিয়োগ করা হবে। এ কথা বলে মিনি আক্তার তাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ নয় কাল বলে তাদের ঘোরানো হচ্ছে।

এ সময় যারা টাকা দিয়েছে তারা এনজিওটির ওই দুই কর্মকর্তাকে ঘিরে ধরে।

সংস্থাটির শিক্ষা কর্মসূচিতে কমর্রত প্রায় ১৫ জন শিক্ষিকা ও সুপারভাইজার (নারী) অভিযোগ করে বলেন, ৩০০ সুপারভাইজার ও ২১৫ জন শিক্ষিকার কাছ থেকে ব্যাংক হিসাব খোলার কথা বলে এক হাজার টাকা করে নিয়েছেন জহিরুল ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের ব্যাংক হিসাব খোলা হয় নি। তারা নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন না।

শিক্ষিকারা বলেন, সংস্থাটির ২১৫টি বিদ্যালয় রয়েছে। একেকটি বিদ্যালয়ে ৩৩ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ফি ১৫০ টাকা ও মাসিক বেতন ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়। আদায়কৃত অর্থ সংস্থাটির পরিচালক জহিরুলের কাছে জমা রাখা হয়। কিন্তু এসব বিদ্যালয়ে স্কুল ব্যাগ ও পোশাক দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় নি।

জানতে হলে নান্দাইল উপজেলা সমবায় কার্যালয় জানায়, তাদের কাছে এ ধরনের কোনো এনজিওর নিবন্ধন বা অনুমতি নেই। অনকুল সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় লিমিটেড কর্তৃক নান্দাইলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিএও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

Bootstrap Image Preview