ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শতকের শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় ফ্লোরেন্স। আজ বৃহস্পতিবার নাগাদ এটি দক্ষিণ ক্যারোলিনায় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করছেন দেশটির আভাওয়া বিদরা।
এদিকে স্থানীয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত তিন দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেনের রূপ ধারণ করেছে ফ্লোরেন্স। ক্যাটাগরি ৪ মাত্রার হারিকেনটি আরো শক্তি সঞ্চার করে আজ নর্থ ক্যারোলাইনায় আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসন বলছে, এই ঝড় এতটাই শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে যে, এতে আট লাখের বেশি বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, ১৭০ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ লাখ কোটি টাকার বেশি) সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে হারিকেন ফ্লোরেন্স মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী হারিকেন ফ্লোরেন্স ধেয়ে আসায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সাউথ ক্যারোলাইনা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়া এলাকার বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ক্ষয়ক্ষতি থেকে ঘরবাড়িকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি দুর্যোগের সময়ে টিকে থাকতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সংগ্রহ করেছেন তারা। খাবার সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় এসব রাজ্যের বেশিরভাগ সুপারশপের খাবারের তাকগুলো খালি হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানায়, হারিকেনটি ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে এবং ক্রমেই তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হতে পারে।
বলা হচ্ছে, ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়া হুগোর পর ফ্লোরেন্স হবে ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড়। সেই সময় ঝড়ে অন্তত ৪৯ জনের প্রাণহানি হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাত বিলিয়ন ডলারের সম্পদ।
এনএইচসি জানিয়েছে, ফ্লোরেন্সের ঝড়ো বেগের কারণে জীবন ঝুঁকির শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। প্রবল বর্ষণে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ডেন মিরার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটি কারো কারো জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর কুপার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা দানবের শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে। সত্যিই এটা অনেক ভয়ঙ্কর, আর তাই নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে যেখানে আছে এটা মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’
এদিকে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে হারিকেন ফ্লোরেন্সকে মোকাবিলায় সবধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সবার আগে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমার একমাত্র দায়িত্ব। আমরা হারিকেন ফ্লোরেন্স মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে এমন প্রস্তুতি কেউ কখনো নেন নি। ইতোমধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান।’