মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের সুলতানদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাজপ্রাসাদের এক ঘোষণায় জানানো হলেও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, আগের দিন রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
গত শুক্রবার রাজার সঙ্গে দেখা করে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন এমন প্রস্তাব উত্থাপন করেন যা থেকে পার্লামেন্ট বাতিল হয়ে যেতে পারে। সম্ভাব্য এই পদক্ষেপের ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী রাজনীতিবিদরা।
শনিবার রাজপ্রাসাদের তত্ত্বাবধায়ক আহমেদ ফাদিল সামসুদ্দিন এক বিবৃতিতে জানান, রাজা শিগগিরই দেশের অন্য শাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে মুহিউদ্দিনের প্রস্তাব নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পার্লামেন্টের ২২২ সদস্যের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন থাকা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম গত সপ্তাহে নিজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার দাবি করলে তার ওপর আরও চাপ বৃদ্ধি পায়।
রাজনৈতিক এই অস্থিরতার পাশাপাশি নতুন করে করোনা মোকাবিলায়ও হিমশিম খাচ্ছে মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যা একমাস আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। গত সপ্তাহ প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ জন করে শনাক্ত হলেও শনিবার দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২২৪ জন। শনিবার একদিনেই দেশটিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার খবরে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকার যখন নিজেই হুমকির কারণ তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা স্বৈরতন্ত্র ও কর্তৃত্বতন্ত্রের দিকে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
শুক্রবার রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে জরুরি বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের মন্ত্রিসভা। ওই বৈঠকে পুলিশপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুহিউদ্দিন।
মালয়েশিয়ান বার কাউন্সিলের সাবেক সাত সভাপতি এক খোলা চিঠিতে বলেছেন, করোনার আগের ঢেউ মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার সাফল্য প্রমাণ করে বিদ্যমান আইন দিয়েই সংক্রমণের পরবর্তী ঢেউ মোকাবিলা সম্ভব। সরকারকে পরিস্থিতি পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশে কোনো সহিংসতা কিংবা নিরাপত্তা হুমকি নেই।
আগামী ২ নভেম্বর মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের পরবর্তী অধিবেশন শুরুর কথা রয়েছে। আর ৬ নভেম্বর বাজেট উপস্থাপনের কথা রয়েছে। আর সেটিই হবে সরকারের জন্য প্রথম পরীক্ষা। সরকার বাজেট পাস করতে ব্যর্থ হলে তা অনাস্থা ভোট হিসেবে বিবেচিত হবে আর এর জেরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে পারে।