Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এতিমদের টাকা আত্মসাৎ কোটি টাকার আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন মোক্তার হোসেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২০, ০৭:১৪ PM
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০, ০৭:১৪ PM

bdmorning Image Preview


এতিমদের ভুয়া তালিকা তৈরি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের শহীদ ইয়ার উদ্দিন বয়াতী এতিমখানার প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে। এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এতিমদের খাবার এবং পোশাক বাবদ আসা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি।

এ ঘটনায় গত ১ অক্টোবর দান ও সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোজেশ্বর-জপসা চাহেদআলী হাফেজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার পাশে ২০০৪ সালে এতিম খানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০০৫ সাল থেকে সরকারি অনুদান পাওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকারি অনুদানের টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেনি সমাজসেবা অফিস ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ।

তবে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৪ জন এতিম দেখিয়ে সাত লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৪ জন এতিম দেখিয়ে সাত লাখ ৬৮ হাজার টকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৬৪ জন এতিম দেখিয়ে সাত লাখ ৬৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৬৭ জন এতিম দেখিয়ে ফের ১৬ লাখ ৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক হাফেজ মোক্তার হোসেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এতিমখানায় একটি সাইনবোর্ড ছাড়া এখন আর কোনো কার্যক্রম নেই। ৩-৪ জন ছাড়া কোনো সময় এতিমদের থাকতে দেখেননি তারা। বর্তমানে এতিমখানাটির প্রধান গেট তালাবদ্ধ। এতিমখানার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাধারণ মানুষের দান ও সরকারি অনুদানের দেয়া এতিমদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে কোটি টাকা ব্যয় করে নড়িয়া চান্দনি এলাকায় আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক।

অভিযোগ প্রসঙ্গে এতিমখানার প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোক্তার হোসেন বলেন, সরকারি অনুদানের যত টাকা পাই তার অর্ধেক সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় দিতে হয়। বিএনপি আমলে চেকের মাধ্যমে দিতাম। আর এখন নগদ টাকা দিতে হয়।

তিনি বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে পাওয়া টাকা এনে ছাত্রদের খাবার এবং পোশাক বাবদ খরচ করেছি।

বাড়ি নির্মাণ প্রসঙ্গে হাফেজ মোক্তার হোসেন বলেন, ইসলামী ব্যাংক ও সমাজসেবা অফিসসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন উত্তোলন করে বাড়ি করেছি।

ভোজেশ্বর-জপসা চাহেদআলী হাফেজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার বলেন, এতিমখানা ও মাদরাসা পরিচালনা করতেন হাফেজ মোক্তার। ২০২০ সালে আমি মাদরাসার সভাপতি হওয়ার পর হাফেজ মোক্তারের কাছে এতিমখানা ও মাদরাসার হিসাব চাইলে হাফেজ মোক্তার হিসাব দিতে রাজি হননি। দান ও সরকারি অনুদানের দেয়া এতিমদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে কোটি টাকা ব্যয় করে আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি।

নড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন, আমরা এতিমখানার সমস্ত কাগজপত্র ও রেজুলেশন হালনাগাদ পেলেই শুধুমাত্র টাকার চেক দিয়ে থাকি।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি যেনে ওই এতিমখানায় নড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলাম। তারা এতিমখানাটি বন্ধ পেয়েছে। যদি টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হয়, তাহলে অনুদান বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে এবং টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবার কেউ এতে জড়িত থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Bootstrap Image Preview