Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কিংবদন্তি শফীর নীরব বিদায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৩৫ AM
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


তোফায়েল গাজালি।। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এক বুক বেদনা, এক রাশ ঘৃণা আর আর কতগুলো অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়েই বিদায় জানিয়েছেন মাটির পৃথিবীকে।

যে প্রতিষ্ঠানটির জন্য তিলে তিলে নিজেকে ক্ষয় করেছেন। আলো জলমল কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যার জন্য। ভরা যৌবন তো বটেই বাধ্যর্কের বিছানায় পড়া সময়গুলোতেও যে প্রতিষ্ঠানটির চিন্তায় থাকতেন উদ্বিগ্ন। সেটি দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা।

ষড়যন্ত্র হয়েছে তাকে তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য। তার গায়ে মিথ্যা তকমা এটে দেয়া হয়েছে যেন তিনি চলে যান এখান থেকে। কিন্তু অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে তিনি তার প্রিয় মাদরাসাটিকে বুকে আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়।

তার ইচ্ছে ছিল শেষ দিনটিতেও তিনি তার যত্নে গড়া এই বাগানটির পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে ফুলের ঘ্রান নেবেন ফলের স্বাদ উপভোগ করবেন।

কিন্তু সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর একটি মহলের উসকানিতে ছাত্র আন্দোলনের নামে তার স্বপ্নের জায়গাটিতে যা হল তা কোনদিনও তিনি ভাবেননি।

কতটা কষ্টে! তিনি নিজেই অব্যাহতি নিলেন মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন ছেলে আনাস মাদানীকেও। সঙ্গে সঙ্গে যেন চির অব্যাহতিও নিয়ে নিলেন অমানবিক ও অকৃতজ্ঞ এ চারণভূমি থেকে।

সেদিন রাতেই তাকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সোয়া ৬ টায় সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্নাল্লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তার বাধ্যর্কজনিত কারণে এর আগেও কয়েকবার মৃত্যুর খবর ছড়িয়েছে ভার্চুয়াল জগতে। গতকাল সন্ধায়ও এমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু না এবার তিনি সত্যি চলে গেলেন।

সবাইকে হতবুদ্ধি, নির্বাক ও শোকাহত করে চলে গেলেন। চলে গেলেন সমালোচকদের কাঁদিয়ে। চলে গেলেন অপপ্রচাকারীদের কাঁদিয়ে। চলে গেলেন মিথ্যা অপবাদ আরোপকারীদের কাঁদিয়ে।

চলে গেছেন বন্ধু ও শত্রুদের কাঁদিয়ে। তিনি শোক সাগরে ভাসিয়ে গেছেন, দল-মত, ব্যক্তি-গোষ্ঠি, দেশ-জাতি ও পক্ষ-বিপক্ষের সবাইকে। তিনি শূন্য করে চলে গেছেন আমার-আমাদের এই পৃথিবী।
অমাবস্যার কালো রাতে মরুর কাফেলা তাদের দলপতি হারিয়ে যেমন কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যায় সেই অবস্থা হয়েছে আজ ধর্মপ্রাণ মানুষের।

তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের অগ্রদূত শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) অন্যতম খলিফা।

বাংলাদেশর ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদীন। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমীয়া বাংলাদেশ ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং বহুল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শুধুমাত্র এরকম দু-চারটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচলক বা আমীর হিসেবে পরিচয় করে দেয়া হবে মারাত্মক ভুল বরং তিনি ছিলেন- এদেশের লক্ষ কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু।

তিনি ছিলেন তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক রাহবার। তিনি তাদের বন্ধু ছিলেন, অভিভাবক ছিলেন। তিনি তাদের ঈমান ও ইসলামের রক্ষক ছিলেন।

মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সংকটে নিজেকে বুলেটের সামনে মেলে ধরার এক দুঃসাহসী মন্ত্র রপ্ত করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তিনি যে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন তার তুলনা ইতিহাসে বিরল।

সব শ্রেণির মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার এক অদ্ভুত যোগ্যতা আল্লাহ তাকে দিয়ে ছিলেন ফলে তার ইন্তেকালে বন্ধু-শত্রু সবাই শোকে কাতর।

আফসোস! তাদের জন্য যারা তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। আহা! তারা তো আর কোনদিনই তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেনা।

তিনি তো প্রশংসিত মরণে স্রষ্টার কাছে চলে গেছেন। কিন্তু যারা বয়োবৃদ্ধ মানুষটাকে মানসিক চাপ দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছেন, তাদের কী হবে?

লেখক: তরুণ আলেম ও চিন্তক

Bootstrap Image Preview