রাজধানীর কাঁঠালবাগানে একটি ভবনের ৯ তলার বারান্দা থেকে 'লাফিয়ে পড়ে' সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত ও তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলাবাগান থানাধীন কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১৬৩ নম্বর বাসা থেকে লাফিয়ে পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলামের ছেলে ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ। তার বয়স আনুমানিক ৩৩ বছর।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার আসিফ নেশা করতেন। তিন মাস রিহ্যাবে চিকিৎসাও নিয়েছিলেন।
তার স্ত্রী সাবরিনা শাহিদ নিশিতা। তাকে প্রেম করে বিয়ে করেন আসিফ। এই বিয়ে মেনে নেয়নি তার পরিবার। এ কারণে বাবাসহ পরিবার মিরপুরে থাকলেও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির বাসায় থাকতেন আসিফ।
আসিফের শ্যালক সাইমন শাহিদ নিশাদ জানান, চার বছর আগে আসিফ তার বড় বোন সাবরিনা শাহিদ নিশিতাকে প্রেম করে বিয়ে করেন। আসিফের পরিবার এটি মেনে নেয়নি। এ জন্য আসিফ কাঁঠালবাগান শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই।
নিশাদ আরও বলেন, আসিফ ও সাবরিনার সঙ্গে মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া হতো। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস উত্তরায় একটি রিহ্যাবেও ছিলেন তিনি।
নিশাদের ভাষ্য, গত রাতে আবারও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে আসিফ ৯ তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন।
সংকটাপন্ন অবস্থায় আসিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র জানান, খবর পেয়ে আমরা কাঁঠালবাগানের বাসায় যাই। সেখানে নিহতের বাবা-স্ত্রীসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। আসিফের স্ত্রীর ভাষ্য– ব্যারিস্টার আসিফ নিয়মিত বিয়ার খেতেন। গত রাতেও খেয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। আসিফ রাতে বারান্দায়ই বসা ছিলেন। শেষ রাতে আচমকা ৯ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন।
এদিকে আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আসিফ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো না, তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পরে এখানে এসে আসিফকে মৃত দেখতে পাই। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। তদন্তে কেউ দোষী হলে তার বিচার দাবি করেন।
ওসি জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। আসিফের গায়ে স্পট পাওয়া গেছে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ বাগবাড়ী এলাকার অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম খানের ছেলে। শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬-৯০ মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি কামারখন্দ) আসনের এমপি ছিলেন। আসিফ ব্যারিস্টারি পাস করে সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিস করছিলেন।