মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সিনহার তথ্যচিত্র নির্মাণ কাজের সহযোগী সিফাত কারাগার থেকে মুক্তি পান দুপুরে। পরে নম্বরবিহীন একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে তাকে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
আগেই মুক্তি পাওয়া আরেক সহযোগী শিপ্রা ও সিফাত বর্তমানে তাদের নিকটাত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
সোমবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুর দুইটার দিকে সিফাতকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সিফাত ও শিপ্রা দু’জনই তাদের নিকতাত্মীয়ের বাসায় আছেন। তাদের সঙ্গে র্যাব ও তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকতা বলেন, সিফাত একটু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি খুব ট্রমার মধ্যে আছেন। এজন্য আমরা একটু সময় নিচ্ছি। মানসিক চাপ কমলেই আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো।
‘শিপ্রা দেবনাথও তার নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে রয়েছেন। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। শিপ্রা এ মর্মান্তিক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। আমাদের বলেছেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দেখে যেতে চান। ’
সিফাত ও শিপ্রা দু’জনের সঙ্গেই র্যাবের যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তারা আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। আমরাও সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এমনকী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আর তারা যদি কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
মামলায় অভিযুক্তদের রিমান্ড ও সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চার আসামিকে কারাফটকে দু’দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বাকি তিনজনের বিষয়ে আমরা একটু আস্তে-ধীরে এগোচ্ছি। মামলার কার্যক্রম আরেকটু গুছিয়ে রিমান্ডের আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে।
এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে সিফাতের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমরা পুলিশের সাজানো মামলা থেকে সিফাতের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ পাঁচ হাজার টাকা জিম্মায় সিফাতকে জামিন দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবকে ন্যস্ত করেছেন। সিনহা হত্যা মামলার একমাত্র সাক্ষী সিফাতকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আইনি কোনো সমস্যা নেই।’
পরে সিফাতের মামা মাসুম বিল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সিফাত আমার সঙ্গেই আছে।' কবে ঢাকায় ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, `কয়েক দিন দেরি হবে।'
আগের দিন রোববার দুপুরে জামিন পান সিনহার দলে থাকা আরেক সদস্য শিপ্রা দেবনাথ। সিফাত ও শিপ্রা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিষবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা।