Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

তামিমের সঙ্গে কোহলির ফেসবুক আড্ডার সম্পূর্ণ অনুবাদ

রিমন ইসলাম।।
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২০, ০৬:০৫ AM
আপডেট: ১৯ মে ২০২০, ০৬:০৬ AM

bdmorning Image Preview


ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি বর্তমান সময়ে সেরা ব্যাটসম্যনদের মধ্যে অন্যতম একজন । টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সব ফরম্যাটেই তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে ওয়াডেতে রান তাড়া করে ম্যাচ জেতাতে কোহলির ধারে কাছে কেউ নেই।

সোমবার (মে ১৮) রাতে তামিম ইকবালের আমন্ত্রনে ফেসবুক লাইভে কোহলি মন খুলে অনেক না বলা কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের লাইভটি ইংরেজি এবংহিন্দি ভাষায় হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেনি। তাদের সুবিধার্থে তামিম কোহলির ফেসবুক আড্ডার কথোপকথন সম্পূর্ণ অনুবাদ করেছেন রিমন ইসলাম। 

তামিম: আমি আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় যখন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। পরবর্তী দুই-তিন বছরে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন ব্যাটসম্যানে পরিনত হন। এই সময়ে আপনি কি করেছিলেন যা আপনাকে বদলে দিয়েছিলো?

কোহলি: আমি মনে করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন আসার সময় সবার ভেতরই দ্বিধাদ্বন্দ থাকে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাবো, ক্যারিয়ার কেমন হবে। অভিষেকের পর একটি সিরিজ খেলে দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। তারপর আবার ডাক পাই ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। সেখানে দুই-তিনটি ম্যাচে আমি ভালো খেলেছিলাম, একটি শতকও ছিল। সেখান থেকে আমার আত্নবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম শতক হাকানোর পর আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি কাজটা আমি লম্বা সময়ের জন্য করতে পারবো। ভারতের হয়ে অনেকদিন খেলতে পারবো। কারন একজন তরুন ক্রিকেটার হিসেবে যখন তিন নাম্বারে আপনি পারফর্ম করতে শুরু করবেন চাপের মুখে, তখন খেলা চলাকালীন সময়েই আপনার মানসিকতার পরিবর্তন হতে পারে। তবে সেখানে পারফর্ম করার জন্যও আপনার প্রস্তুতি দরকার। বিশ্বাসটা থাকা দরকার যে ম্যাচে আমি একজন তরুন ক্রিকেটার হলেও, আজকাল আমাদের দলে যে তরুনরা আসে তাদের আমি একই কথা বলি যে এটা গুরুত্বপূর্ণ ‍নয় যে তোমার সামনে যে আছে সে ১৫০ ম্যাচ খেলুক কিংবা ২০০, সেদিন যদি তোমার মনস্থির থাকে তাহলে তুমি সেদিন ভাল করতে পারবে। তুমি ম্যাচ জেতাতে পারবে, সেটা তোমার দ্বিতীয় ম্যাচ হোক অথবা তৃতীয়। আমি এটাই সবসময় এটাই বিশ্বাস করি। আমার চেয়ে একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যদি আউট হয়ে যায় তাহলে আমি ভাবিনা আমার কি হবে। আমি এটা আমার জন্য সুযোগ হিসেবে দেখি যে যদি সে কাজটা না করতে আর আমার যদি আত্নবিশ্বাস থাকে তাহলে আমি তা করতে পারবো। তাই আমি মনে করি নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেকোন পরিস্থিতিকে ভিন্ন চোখে দেখতে পারেন। যদি অন্যরা সেটা না দেখতে পারে এবং আপনি পারেন, তাহলে আপনার পারফর্মেন্স ভালো হবে, আপনি ম্যাচ জেতাতে পারবেন। এই ব্যাপারটা আমি নিয়মিত অনুশীলন করে আসছি। ম্যাচে যদি আপনার মনোভাব যদি ঠিক থাকে তাহলে সেটার ফল আসবেই। এটাই ছিল আমার সাধারন প্রক্রিয়া যে আমি যাবো এবং যা কিছুই হোক না কেন দলের জন্য খেলবো। দলকে জেতানোর চেষ্টা করবো। সেখানে পারফর্মেন্স ভালো হলে ভালো, কিন্তু সবসময় দলকে জেতানোই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।

তামিম: যখন আমি আপনাকে প্রথম দেখি তখন আপনার ব্যাটিং স্ট্যান্স ছিলোচ সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং শট খেলতেন। এখন আপনি ভিন্নরকম। এখন আপনি ব্যাক এণ্ড ক্রসে খেলেন। আমি অনেক কোচের সাথে কথা বলেছি এবং তারা আমাকে ব্যাক এন্ড ক্রসে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও আমি কখনোই তাতে অস্বস্তিবোধ করেছি। আপনার কাছে জানতে চাই কেন এই পরিবর্তনটি করেছিলেন?

কোহলি: এটা ছিল ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত তাই আমি পরিবর্তন করেছিলাম কারন আমার মনে হয়েছিল আমি মাঠের চারদিকেই শট খেলার চেষ্টা করছিলাম। তাই আমার মনে হয়েছিল স্ট্যাটিক পজিশনে স্টান্স দাঁড়ানোটা কোনভাবে আমার শট খেলার পছন্দকে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছিলো। আমার মনে হয়েছিল আমি শুধু একভাবেই খেলে যাচ্ছি। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমার বেসিক ধারনাটা হল যতক্ষন আপনার কোমর ঠিকমত সেরা অবস্থানে থাকবে জায়গা বদলের জন্য, পায়ের অবস্থান বদল করে আপনি যেকোন শট খেলতে পারবেন। তাই আমার মনে হয়েছিল স্ট্যাটিক পজিশনে আমার জন্য সেটা কাজ করছিলোনা। যদিও অনেকের জন্য এটা কাজে লেগেছে। শচীন টেন্ডুলকারও স্ট্যাটিকেই খেলতেন, তার কখনো কোন সমস্যা হয়নি। তার হ্যান্ড-আই কোঅরডিনেশন এবং টেকনিক দুটোই অতিমানবীয় ছিল। তাই আমাকে আমার খেলার ধরনের ওপর ভিত্তি করে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নতুন কিছু চেষ্টা করতে হয়েছে। চেষ্টা না করা পর্যন্ত আমি বুঝতে পারতাম না কোনটা কাজে লাগবে। তাই আমি বলতে চাই আপনার যদি নতুন কিছু করতে চান তাহলে সেটা অনুশীলন করুন। আর অবশ্যই সেটা দুই-একটি ম্যাচে গিয়ে চেষ্টা করে দেখুন। কারন আমার অভিজ্ঞতা বলে অনুশীলনে আপনি যতই করুন না কেন একটি ম্যাচে যেখানে আপনি আউট হয়ে যেতে পারেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকতে পারে, প্রতিপক্ষের চাপ থাকতে পারে, যেখানে আপনার একটি ভাল ইনিংস খেলা দরকার সেই সময়ে আপনি যা অনুশীলন করেছেন সেটার প্রতিফলন যদি ঘটাতে পারেন তাহলে আমি মনে করি এটা আপনাকে বিশ্বাস যোগাবে যে আপনি প্রস্তুত। কিন্তু আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায় তখনি যখন আপনি ম্যাচে পারফর্ম করতে পারবেন। ব্যাটিংয়ে আমি যা যা পরিবর্তন করি সেটা যদি একবার ম্যাচে কাজে লেগে যায়, আমার অভিজ্ঞতা বলে তাহলে সেটা নতুন একটি পছন্দ হিসেবে কাজ করে।

তামিম: প্রথম যখন নতুন স্ট্যান্স চেষ্টা করলেন ম্যাচে, তখন কি কোন অস্বস্তিবোধ কাজ করছিলো?

কোহলি: আসলে আমাকে বলার জন্য যারা থাকতেন, তাদের আমি বিশ্বাস করতাম। সামনে থেকে কেউ যদি বলে যে তুমি যদি এটা করো তাহলে নতুন একটি পছন্দ হতে পারে, তাহলে আমি সেটা একবার চেষ্টা করে দেখি যে কি হয়। সৌভাগ্যক্রমে প্রথম এক-দুইবারেই শট গুলো এমনভাবে হয়ে যেত যা আমি নিজেও ভাবিনি। তো এভাবে আপনার বিশ্বাস বাড়তে শুরু করে যে সবসময় একভাবেই না খেলে আপনার চিন্তাজগতকে উন্মুক্ত রাখা উচিত যাতে নতুন কিছু বোঝা যায় এবং শিখা যায়। একভাবে বলতে গেলে আমি অনেক খেলোয়াড়কেই দেখি এটা ধরেই নেয় আমিতো এভাবেই খেলি। কিন্তু একটা সময় আসে যখন প্রতিপক্ষ আপনার খেলার ধরন বুঝে ফেলে, তাহলে আপনাকে কিন্তু নিজের খেলা সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবেই আপনি ধারাবাহিক হতে পারবেন। তাই আমি মনে করি আপনার চিন্তাজগতকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। যেকোন ব্যাটসম্যানকেই পরিবর্তন আনতে হলে উন্মুক্ত থাকতে হবে। চেষ্টা করে দেখুন, যদি সেটা কাজে না লাগে তাহলে আগে যেভাবে খেলতেন সেভাবেই খেলবেন। আর যদি সেটা কাজে লেগে যায় তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে যারা আছেন, তারা আপনার ভালোর জন্যই বলছেন যা দলের জন্যও ভালো ফল বয়ে আনবে। তাই সামনে থেকে কেউ যদি বলে নতুন কিছু তাহলে আমি সেটা একবার চেষ্টা করে দেখি।

তামিম: আপনি প্রস্তুতি কতোটা বড় আকারে নিয়ে থাকেন? আপনি কি নেটে অনেক বল পেটাতে পছন্দ করেন?

কোহলি: প্রস্তুতির জন্য আমার কোন নির্দিষ্ট কোন প্যাটার্ন নেই। নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আমি ফলো করি ফিটনেস এবং ডায়েটের বেলায়। কারন আমি মনে করি ট্রেনিং এবং ডায়েট ধারাবাহিক হওয়া উচিত। কারন আপনার শরীর যদি সেরা অবস্থানে থাকে এবং মানসিকভাবে আপনি ভালো অনুভব করেন তাহলে প্রতিবারই আপনি নিজের সেরাটা দিতে পারবেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমি মনে করি যখন বল ঠিকমত ব্যাটে আসছেনা এবং আপনি আত্নবিশ্বাসহীনতায় ভুগবেন, তখন নিজের থেকেই মনে হবে আমার আরো বেশি অনুশীলন করা উচিত যতক্ষন পর্যন্ত সেই সেশনটা না আসবে যখন মনে হবে আজকে ব্যাটিং ঠিকমত হয়েছে। আমি যখন সেই সেশনটা পেয়ে যাই, এরপর আট থেকে দশ মিনিটের বেশি আমি আর অনুশীলন করিনা। থ্রো ডাউন যা সবার কাছে চলে এসেছে সেটা কিছুক্ষন অনুশীলন করে উঠে যাই।কারন একটা জিনিস যখন ভালো হয় এবং আপনি সেটা অতিরিক্ত করে ফেলেন তখন বাযে অভ্যাস হয়ে যায়। যেহেতু সব শটই খেলতে পারছেন তাই আপনি যেকোন শটই মারা শুরু করে দিবেন। সেখানে কিছু ভুল হতে পারে, হতাশা তৈরি হতে পারে। আপনি আরো খেলতে থাকবেন এবং আরো খারাপ হতে পারে । তাই যত বেশি চেষ্টা করবেন, সেটা একসাথে সব নিম্নমুখীও হতে পারে। তাই এই সচেতনতাটা সবার থাকা উচিত। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই বুঝতে পারে এই সেশনে তার সব ঠিকমত হয়েছে। নেট থেকে বের হয়ে আসাও একটা স্কিল যে আমাকে কখন নেট থেকে বের হতে হবে। কারন অতিরিক্ত দশ-পনেরো মিনিটে কিছু ভুল হতে পারে।

তামিম: আমি ১০-১৫ মিনিট অনুশীলন করতে পছন্দ করি কঠোরভাবে। আবার মুশফিকুর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করে। আমি মনে করি এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার যে নেটে কে কেমন ফল পাবে।

কোহলি: আসলেই এটা পুরোপুরিভাবে ব্যক্তিগত ব্যপার। আমি যদি পুজারার কথা বলি, সে টীণ ঘণ্টা ব্যাট করবে। দলের সবার ব্যাটিং সে একাই করে ফেলবে। এটা প্রত্যেকের আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর ভিন্ন ভিন্ন ধারন থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় যদি আমার মাথা ঠিকভাবে কাজ করে, এমনকি মাঠের বাইরেও যখন ট্যুরে হাঁটতে কিংবা কফি খেতে বের হবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সবসময় সিরিয়াস মুডে থাকতে পারবেন না। আপনার মানসিক অবস্থা যদি ভালো থাকে তাহলে ম্যাচেও সেই ভালো লাগার আত্নবিশ্বাসটা নিয়ে যেতে পারবেন। ক্রিকেট সবাই খেলতে পারে। মাঝে মাঝে আমরা সেটা জটিল করে ফেলি এবং চাপে পড়ে যাই।

তামিম: রান তাড়া করার সময় আপনি ম্যাচটিকে কিভাবে ভাগ করেন? মাথায় কি কি কাজ করে?

কোহলি: রান তাড়া করার সময় মানসিক অবস্থা স্বাভাবিকই থাকে। মাঝে মাঝে মুশফিকের মত অনেকেই পেছন থেকে অনেক কিছু বলে যাতে আমি আরো অনুপ্রাণিত হয়ে যাই। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমি নিজেকে যা বলতাম সেটা এখন তরুণদেরও বলি যে তমাকে বিশ্বাসটা রাখতে হবে যে তুমি পারবে। ছোটবেলায় টিভিতে যখন ভারতের খেলা দেখতাম তখন তাড়া করতে গিয়ে ভারত হেরে গেলে আমি শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতাম আমি হলে ঠিকই জিতিয়ে দিতাম। বাচ্চা হিসেবে সেটা ছিল আমার স্বপ্ন। তাই যখনি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, ভেতরের সেই আনন্দটা চলে আসে যে আমি জিতাতে পারবো। আমার কাছে মনে রান তাড়া করা এমন একটি ব্যাপার যেখানে আপনি জানেন আপনার কত রান দরকার এবং কি কি করতে হবে। তাই আমার কাছে এর চেয়ে সহজ সমীকরণ আর কিছুই নেই। সেই পরিস্থিতিটা আপনি কিভাবে দেখবেন সেটা আপনার পছন্দ। আমি এমন পরিস্থিতিকে কখনো চাপ হিসেবে না দেখে সুযোগ হিসেবে দেখি। দলের হয়ে জেতা সবসময় গরুত্বপূর্ণ আর এখানে আমার সামনে সুযোগ রয়েছে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে ‍দেয়ার। তাই আমার জন্য এর চেয়ে সেরা সুযোগ আর কিছু নেই যেখানে আমি দেখতে পাই আমি দলকে জেতাতে পারছি।

তামিম: ৩৭০-৩৮০ রান তাড়া করতে গেলেও আপনি একইভাবে চিন্তা করেন?

কোহলি: ৩৭০ কিংবা ৩৮০ রান তাড়া করতে গেলেও কখনো আমার মনে হয়না যে এটা সম্ভব নয়। ২০১২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে হোবার্টে একটি ম্যাচের কথা মনে আছে। সেখানে ৪০ ওভারে আমাদের প্রায় ৩৩০ রানের মত তাড়া করা লাগতো কোয়ালিফাই করার জন্য। বিরতির সময় আমি রায়নাকে বলেছিলাম এই ম্যাচটি আমাদের দুটি ২০ ওভারের ম্যাচে ভাগ করে খেলতে হবে। ৪০ ওভারে কত রান লাগবে সেটা ভুলে আমরা প্রথম ২০ ওভারে দেখবো যে কত রান হয়। তারপর শেষ ২০ ওভারে আমরা আরেকটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবো। হাতে যদি উইকেট থাকে তাহলে তাহলে শেষ ২০ ওভারে আমরা ওভারপ্রতি ১২ রান করেও তুলতে পারবো। এটা আসলে নির্ভর করবে আপনি কিভাবে চিন্তা করে এগিয়ে যাবেন। যেভাবে আপনি ভাববেন, সেভাবেই আপনার ব্যাটিং হবে। আর প্রথম যে চিন্তাটা মাথায় আসবে সেটাই ঠিক করে দিবে আপনি কিভাবে খেলবেন। আমি মনে করি রান তাড়া করার ব্যাপারটা আমার স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। মাঝে মাঝে প্রস্তুতি নেয়া লাগে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা স্বাভাবিকভাবেই আসে।

তামিম: রাঘু আসলে কতোটা দ্রুতগতির? আমি তাকে দেখেছি এবং সে ভীষন দ্রুত।

কোহলি: এটা আমি সংবাদ সম্মেলনে অনেকবার বলেছি যে ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ তে ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে আমাদের যে উন্নতি হয়েছে সেটার মূল অবদান ছিল রাঘুর। ওর মধ্যে অনেক প্যাশন কাজ করে যে ভারতীয় দলের জন্য সে সেবা দিচ্ছে। খেলাটা সে খুব ভাল বুঝে তাই কারো ব্যাটিং ভাল না হলে কিংবা পা ঠিকমত না গেলে সেটা ধরতে পারে। নিজের এতোটাই উন্নতি সে করেছে সে সহজেই ১৫৫ কিঃমি গতিতে থ্রো করতে পারে। আর ধারাবাহিকভাবে ১৪৫ কিঃমি গতিতে সে থ্রো করতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে রাঘুর দ্বারা আমার অনেক উপকার হয়েছে। রাঘুকে নেটে খেলে আপনি যখন ম্যাচ খেলতে যাবেন তখন মনে হবে হাতে অনেক সময় আছে কারন আপনি নিয়মিত তার বিপক্ষে খেলেন। খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছো কারন এই ছোট ছোট বিষয় গুলো মানুষ জানতে পারেনা। তাড়া ভাবে এতদিন ধরে খেলছে, কত ভালো খেলছে। কিন্তু অনুশীলনে যে আপনাকে সাহায্য করছে, তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায় কিভাবে ম্যাচে খেলবো। আমাদের জন্য তাদের অবদান অমূল্য।

তামিম: নিজেকে নিয়ে কখনো সন্দেহ জেগেছে? কখনো মনে হয়েছে আমি যথেষ্ট ভালো নই?

কোহলি: সত্যি বলতে, খেলার সময় একেবারেই না। খেলার সময় আমার কখনোই নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হয়নি। প্রত্যেক মানুষেরই দুর্বলতা থাকে, খারাপ দিক থাকে, নিজেকে নিয়ে সন্দেহও থাকে। অনুশীলনে যখন কোন কিছু ভুল হয় তখন সন্দেহ জাগে হয়ত আমি যথেষ্ট ভালো না। মাথার মধ্যে এসব চিন্তা ঘুরতেই থাকে। আমি মনে করি সবার উচিত শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যখন মনে হবে চিন্তাগুলো আমার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এসবের কোন অস্তিত্ব নেই, এগুলো আমাকে শুধু পেছন থেকে টেনে ধরছে। আমি যদি বিশ্বাস করি আমি যথেষ্ট ভালো, তাহলে আমি যথেষ্ট ভালো। খেলার একটি ভালো দিক হচ্ছে সেখানে আপনি এসব চিন্তাভাবনার সময় পাবেননা। আপনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিবেন, ব্যাটিং করবেন। দলের কি অবস্থা, আপনাকে দলের জন্য কি করতে হব এসব ভাবনাতেই আপনার এনার্জি চলে যাবে। খারাপ চিন্তাভাবনা মাথায় তখনি আসে যখন খেলার বাইরে থাকি, যখন সেই প্রতিযোগিতামূলক ভাবটা থাকেনা। তাই নিজেকে আমি শুধু বলবো আমি যথেষ্ট ভালো। আমি নেটে যাবো এবং নিজের প্রবাহটা ঠিক থাকবে। মাঝে মাঝে একটি ইনিংস খেলার পর মনে হয় আমি কি কি চিন্তা করছিলাম। এতো খারাপ চিন্তাভাবনা কেন করছিলাম। তাই ভেতরে যে কথাগুলো চলতে থাকে তা কখনোই বাস্তব নয়। এটা শুধু আমাদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে চায়। আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এটা ধীরে ধীরে চলে যাবে। আমাদের কাজ হল নিজেকে নিয়ে স্পষ্ট থাকা।

কোহলির  সঙ্গে তামিমের লাইভ আড্ডার ভিডিওটি: 

 

 

Bootstrap Image Preview