Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

তৌহিদী জনতার আস্ফালন ও নষ্টদের অধিকারে সবকিছু যাওয়ার গল্প

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২০, ০৭:০৬ PM
আপডেট: ০৫ মে ২০২০, ০৭:০৬ PM

bdmorning Image Preview


সাজিদ রাহাত।। 

ধর্মান্ধ এই বাটপারদের কাছে 'বিদ্যানন্দ' নামটা হিন্দু নাম বলে মনে হয় কিন্তু নামটা 'ইলম কি খুশিয়া' হলে কোন সমস্যা নেই। কারন, তাদের ভাষায় 'ভাষারও তো ধর্ম আছে'!

বিদ্যানন্দ'র মূল উদ্যোক্তাকে পদত্যাগ করতে হলো তৌহিদী জনতার তীব্র ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদী অাচরণের কারনে। এটা ভীষণ দুঃখজনক এবং লজ্জার। এটা নির্দেশ করে যে সমাজ হিসেবে অামরা কতটা ক্রমপশ্চাৎগামী এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছি। কিছুদিন আগেও আমরা  এতটা খারাপ ছিলাম না। এর থেকেই তো প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশ অমুসলিমদের জন্য না। 

সুতরাং, এই দেশের জনগণ যখন নরেন্দ্র মোদী ও ইসরাইল নিয়ে কথা বলে সেটা বর্জাগারে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার মত কথা। কিন্তু, তবুও তারা এই দ্বিচারণ করেই যাবে কারন তারা তো ভণ্ড। অর্থাৎ, তারা নিজের দেশে 'মুসলিম রাষ্ট্র' কায়েম করতে চায়, তারা চায় যে মধ্যপ্রাচ্য 'ইসলামিক অঞ্চল' থাকুক। আর, বাকি সারা পৃথিবী এবং যেখানেই মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেগুলো অসাম্প্রদায়িক হোক, সেই রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা 'রামাদান কারীম'-এর ভিডিও বার্তা দিক, হিজাব পরে মুসলিমদের সাথে দেখা করতে আসুক। আর  যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে একজন অমুসলিম কল্যাণকর, জনহিতকর কাজও করতে পারবে না, নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চনা তো দূরের কথা। 

তাদের কাছে 'বিদ্যানন্দ' নামটা হিন্দু নাম বলে মনে হয় কিন্তু নামটা 'ইলম কি খুশিয়া' হলে কোন সমস্যা নাই। কারন, তাদের ভাষায় 'ভাষারও তো ধর্ম আছে'! বাংলা, সংস্কৃত এগুলো হলো হিন্দুর ভাষা অার অারবি, উর্দু, ফারসি মুসলমানের ভাষা। কারও কারও জন্য অাবার নতুন করে তুর্কী যুক্ত হয়েছে। তাই, তাদের কাছে 'পবন' হিন্দু নাম আর 'সাবাহ' মুসলিম নাম; অথচ দুটার অর্থ একই- বায়ু বা সমীর। 

আমাদের সমস্যা হলো আমার এই গোষ্ঠীকে অ্যাড্রেস করি না কখনো। তারা সাকিবের স্ত্রীর পোষাক সংক্রান্ত রুচির উপর নিজের ধর্মবিশ্বাসকে চাপায়, তাদের জয়া আহসান ক্লিভেজ দেখালে সমস্যা, তাদের ভাস্কর্যে সমস্যা, তাদের করোনার বিস্তৃতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে মসজিদ বন্ধ করলে সমস্যা, তাদের ইহুদী-নাসারাদের সবকিছু নিয়েই সমস্যা। 

আর তাদের চেয়ে বড় অধম হলো মডারেট মুসলিমরা। মডারেট মুসলিমরা হলো অারবান মিলেনিয়াল কিংবা জেনারেশন Y-এর সদস্য। তারা মানি হাইস্ট, গেম অব থ্রোনস দেখে, পাশ্চাত্যের জীবনযাত্রার সাথে বেশ পরিচিত। কিন্তু, তাদের ভণ্ডামিটা হলো রাজনৈতিক দলের মতো নিজ সদস্যদের disown করে দেয়া। তাদের তৌহিদী জনতা ভাইয়েরা এটা সেটা করে অার তাদের প্রত্যেকবার বলা লাগে 'ওরা সহীহ্ মুসলিম না' 'ওরা ইসলাম কি বলে তাই জানে না'। এই পোস্টেও এমন কমেন্ট অাসবে বলে অাশা করি। 

তাই তাদের অাগেই বলি যে ভাই, দয়া করে আপনাদের  ঐ তৌহিদী জনতা ভাইদেরকে কানের গোঁড়া বরাবর বন চটকনা মেরে 'সহীহ(!)' ইসলাম শিখিয়ে তারপর এখানে  ডিপ্লোম্যাটিক কমেন্ট করতে অাসবেন। কারন আপনাদের  ঐ তৌহিদী জনতার কিংবা মুসলিম ধর্মপ্রাণ লোকজনের 'অ-সহীহ' ইসলাম চর্চার কারনে আমাদের সবার বৃহত্তর পর্যায়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করেন এবং সহীহ ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। কারন, আপনাদের সমগোত্রীয় ঐ ভাইদের কারনে অামরা বারেবার সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ছি এবং অাপনাদের এরকম দায়মুক্তির কারনে সমস্যা আরো জটিল হচ্ছে। 

অ্যাড্রেস করেন যে বেশিরভাগ মুসলিমরাই ধর্মান্ধ (হয়ত অাপনি না) এবং তারপর তাদের শুধরে দেন। একটা উদ্যোগ নিয়ে দেখান। আপনাদের মত একই কাজ আওয়ামী লীগ করে। ছাত্রলীগের কোন কর্মী অাকাম করলে বলা হয় সে সহীহ ছাত্রলীগ না। অর্থাৎ, হয় বহিষ্কৃত না হয় অনুপ্রবেশকারী। তেমনি জঙ্গী হামলাসহ আরো অনেক মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী কর্মকাণ্ড করলেও মডারেট মুসলিমরা সুন্দর করে 'ওরা সহীহ মুসলিম না' বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় অার নয়ত বলে তারা ইহুদী অনুপ্রবেশকারী। তো জনগণ তো অাসলে বুঝে না কে সহীহ আর কে মিছা। তাই যার মিছা তারই সামলানো উচিত। কবি বলেছিল, একদিন সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। তৌহিদী জনতাই বোধহয় এই নষ্টদের সমার্থক।

'এগিয়ে চলো' থেকে সংগৃহীত  

Bootstrap Image Preview