Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ড্রোনের সাহায্যে আড্ডাবাজদের শনাক্ত করছে বাংলাদেশ পুলিশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২৬ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২৬ PM

bdmorning Image Preview


দিন যত যাচ্ছে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করছে সাধারণ মানুষদের ঘরে রাখতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা! প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যেখানে সেখানে দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই এবার  করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাতক্ষীরায় জনসমাগম ও আড্ডাবাজি বন্ধ করতে ড্রোন ব্যবহার করছে জেলা পুলিশ। উন্নত প্রযুক্তির এই ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরা দিয়ে তারা আড্ডাবাজদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনছে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতেও ড্রোনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।  

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশনায় সাতক্ষীরার কলারোয়া থানা পুলিশ আড্ডাবাজদের আস্তানা খুঁজে বের করতে ড্রোন ব্যবহার করে। ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে চিহ্নিত করা হয় আড্ডাবাজদের আস্তানা। একইসঙ্গে চায়ের দোকান খোলা রাখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত আড্ডাবাজদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার পাশাপাশি মানুষকে ঘরে ফেরাতে মহড়াও অব্যাহত রেখেছেন পুলিশ সদস্যরা।

এ বিষয়ে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মুনির-উল-গিয়াস বলেন, 'করোনাভাইরাস সংক্রমণের কবল থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশনায় সর্বপ্রথম আমার থানায় ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়। ড্রোনের মাধ্যমে আড্ডাবাজদের আস্তানা চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে করোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।'

বুধবার (২৯ এপ্রিল) অভিযান চালানো হয় জেলার দেবহাটা থানার বিভিন্ন এলাকায়। অভিযানকালে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, ড্রোন অপারেটর সাকিব জামানসহ থানা পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারের পাশাপাশি এ সময় জনসচেতনতা সৃষ্টি ও মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়।

দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শেখ ইয়াছিন আলী বলেন, 'দেবহাটা থানা এলাকায় আড্ডাবাজি বন্ধের পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।'

এর আগে রবিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে কালিগঞ্জ সার্কেল ও থানা পুলিশের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে জনসমাগম ও আড্ডাবাজদের চিহ্নিত করা হয়।

কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, 'সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় জেলা পুলিশ ও জেলার প্রতিটি থানা করোনা প্রতিরোধে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হয়েছে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা কালিগঞ্জ থানার অলিগলিতে জনসমাগম ও আড্ডাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করে সেই অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হবে। এর ফলে আমাদের অভিযান আগের চেয়ে আরও বেগবান হবে বলে আশা করি।'

তিনি আরও বলেন, 'বিনা প্রয়োজনে যারা ঘোরাফেরা করছেন, তাদের কাছে আমরা একটাই বার্তা দিতে চাই, আপনারা ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। পুলিশ সবসময় আপনাদের সহযোগিতা করবে। অন্যথায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' এ সময় কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দেলোয়ার হুসেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে থাকতে বলা হলেও সেটি অনেকেই মানছেন না। বিশেষ করে যুবকরা বিভিন্ন দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে, পুলিশ যাওয়া মাত্রাই সরে পড়ছে। এ কারণে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান স্যারের নির্দেশনায় জনসমাগম ঠেকাতে ও আড্ডাবাজদের আস্তানা খুঁজে বের করতে ড্রোন দিয়ে অভিযান চালিয়ে থাকি। বাজার মনিটরিং ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতেও সম্প্রতি ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। ড্রোনের মাধ্যমে আমরা আড্ডাবাজকে শনাক্তসহ জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় আনতে পেরেছি। ড্রোন দেখে ভয়ে অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরা জেলা এখনও করোনামুক্ত আছে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ঘরে রাখা। জেলাকে করোনার সংক্রমণ থেকে দূরে রাখা।'

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়েত বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে মোট ৩৪২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এরমধ্যে ১৮৯ জনের রিপোর্ট ইতোমধ্যে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। সব রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।'

Bootstrap Image Preview