Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা পঙ্গপালের দল কতটা ভয়ঙ্কর?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০১:০৩ PM
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০১:০৩ PM

bdmorning Image Preview


আফ্রিকা মহাদেশের কৃষিজমিতে তাণ্ডব চালিয়ে এবার দক্ষিণ এশিয়ার উদ্দেশে ধেয়ে আসছে পঙ্গপালের দু’টি ঝাঁক। ভারতের দৈনিক দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিমধ্যে পঙ্গপালের একটি ঝাঁক ভারতে প্রবেশ করেছে। এছাড়া আরেকটি দল এ অঞ্চলের কৃষিজমিতে সরাসরি হানা দিতে ভারত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও রয়েছে সংকটে। এ সময়ে পঙ্গপালের এমন আক্রমণ ঠেকাতে 'দুই ফ্রন্টে' যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে ভারত। দ্য হিন্দু জানায়, দুই ফ্রন্টের যুদ্ধে করোনাভাইরাস মহামারি ও পঙ্গপাল উভয় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার।

ভারতের একটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানায়, হর্ন অব আফ্রিকা থেকে একঝাক পঙ্গপাল মরু অঞ্চলের আরেকদল পঙ্গপালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এসব ঝাঁক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব ও পাকিস্তান হয়ে ভারতেও হানা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের পাঞ্জাব ও হারিয়ানা রাজ্যে ঢুকে পড়েছে একদল। এদিকে পঙ্গপালের আরও একটি দল ভারত মহাসাগর পাড়ি দিচ্ছে। ভারতের কৃষিজমিতে ক্ষতি করার পর এ দলটি বাংলাদেশের দিকে ফিরতে পারে। পঙ্গপালের এ দুই দল মিলে এ অঞ্চলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

পঙ্গপাল কী?

পঙ্গপাল মূলত এক প্রকার পতঙ্গ। এটি আর্কিডিডি পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি যাদের জীবন চক্রে দল বা ঝাঁক বাঁধার পর্যায় থাকে। এই পতঙ্গগুলো সাধারণত একা থাকে। তবে বিশেষ অবস্থায় তারা একত্রে জড়ো হয়। তখন তাদের আচরণ ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে সঙ্গলিপ্সু হয়ে পড়ে। পঙ্গপাল ও ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণীবিন্যাস নেই। বিশেষ অবস্থায় তাদের প্রজাতিগুলোর একত্রিত হওয়ার যে স্বতন্ত্র প্রবণতা দেখা যায় সেটাই মূল পার্থক্য।

নতুন ধরনের পঙ্গপালের ১০ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। আগামী এপ্রিলে এই পঙ্গপাল নতুন করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এ সময়টিকে পঙ্গপালের বংশবৃদ্ধির সময় বলে বিবেচনা করা হয়।

কতটা ভয়ঙ্কর এই পঙ্গপাল?

১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তান। এই ধাপে ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে প্রথম পঙ্গপালের আক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটি সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের ৯ লাখ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি রুপি মূল্যের ফসল ও গাছপালা।

ভারত-পাকিস্তানের বাইরে সৌদি আরবও পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পতঙ্গটির আক্রমণ দেশটির কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

আফ্রিকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭ কোটি ডলারের অনুদান চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির প্রধান মার্ক লোকক বলেন, আফ্রিকায় এই ভয়াবহ পঙ্গপাল উদ্বেগজনক হারে ফসল ধ্বংস করছে। ইতোমধ্যেই খাদ্য স্বল্পতায় থাকা পরিবারগুলো তাই আরও বিপাকে পড়েছে।

ধর্মীয় গ্রন্থে পঙ্গপালের উল্লেখ

পঙ্গপালের ইতিহাস বহু পুরনো। প্রাচীন মিসরীয়দের কবরে এর ছবি দেখা যায়। এছাড়া গ্রিসের ইলিয়াডে এই পতঙ্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাইবেল এবং কোরআন এর মতো ধর্মগ্রন্থেও পঙ্গপালের কথা বলা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থে এই পতঙ্গকে ঈশ্বরের শাস্তিস্বরূপ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা রয়েছে।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে বাতাসে বা মাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। তবে আফ্রিকায় পঙ্গপালের যে ভয়াবহতা তাতে শুধু কীটনাশক ব্যবহারে ফল মিলবে না বলে মনে করছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্লেষকরা পঙ্গপালের আক্রমণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। জাতিসংঘের পঙ্গপাল পূর্বাভাস বিষয়ক কর্মকর্তা কিথ ক্রিসম্যান বলেন, ওমানের মরুভূমিতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক বৃষ্টি হওয়ায় এই পঙ্গপালগুলো আফ্রিকায় চলে গেছে। তিনি বলেন, আমরা জানি ঘূর্ণিঝড় থেকেই্ এই পতঙ্গের আগমন ঘটে। বিগত ১০ বছরে ভারত সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Bootstrap Image Preview