Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জাপানে ভালো নেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩০ PM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩১ PM

bdmorning Image Preview


মনজুরুল হক, টোকিও।। 

সারাবিশ্বের মত করনাভাইরাসের প্রভাব জাপানের উপরেও পড়েছে। আর সেই ধাক্কা লেগেছে জাপানে অবস্থানরত বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উপর।  

জাপানে শিক্ষা বর্ষ এপ্রিল মাসে শুরু হয়, শেষ হয় পরের মার্চে। মার্চ মাস তাই শিক্ষা সমাপনীর মাস। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে চাকরি জীবন যারা শুরু করতে যাচ্ছে, তাদের জন্য এই মাসটি গুরুত্বপূর্ণ। মার্চ মাসের শেষ দিকে গ্র্যাজুয়েশন উৎসবে স্নাতক সনদ গ্রহণ করে এপ্রিলের শুরু থেকে এদের অনেকে চাকরি জীবন শুরু করে। তবে এ বছর হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের কারণে সেই ছক পালটে যেতে শুরু করেছে।

জাপানের যেসব তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে চাকরি জীবন শুরু করতে যাওয়ার পথে ছিল, এদের মধ্যে বড় এক অংশকে এখন বলা হচ্ছে অপেক্ষায় থাকতে। সরকারি দপ্তর কিংবা বড় কোম্পানির চাকরি যারা পেয়েছে তাদের অবশ্য সেরকম ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে না। বিপদ হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানে যাদের যোগ দেওয়ার কথা ছিল, তাদের। এদের বড় অংশকে অপেক্ষায় থাকতে বলা হলেও অন্যদের আবার বলে দেওয়া হয়েছে অনিশ্চিত এই সময়ে কোম্পানির পক্ষে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্বপ্নভঙ্গই কেবল নয়, এদের মধ্যে যারা লেখাপড়ার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন তাদের বেকার জীবনে ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ানোর বিপদ বাস্তব হতে শুরু করেছে। ফলে এদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, করোনা মহামারির মুখে সরকারকে এখন তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

হঠাৎ দেখা দেওয়া এই সমস্যা যে কেবল জাপানিদের বিপাকে ফেলছে তা নয়। জাপানে লেখাপড়া করতে আসা প্রচুর সংখ্যক বিদেশি ছাত্রকেও ভিন্ন এক দিক থেকে একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি সাধারণত শিক্ষার পাট চুকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় এবং এদের মধ্যে বড় এক অংশ মার্চ মাসের শেষ দিকে জাপান ত্যাগ করে। করোনার কারণে এদের পক্ষে দেশে ফেরাও সম্ভব হচ্ছে না।

আর যারা বৃত্তির অর্থে লেখাপড়া না করে দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা অন্যান্য জায়গায় কাজ করে লেখাপড়ার অর্থ জোগাড় করে পাঠ শেষ করেছে, সেরকম শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে আরও অনেক বেশি জটিল। জাপান সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে সেই অনুমতির একটি শর্ত হচ্ছে কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র এদের হতে হবে। ছাত্র জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাজের সুযোগ এদের জন্য খোলা থাকে না। ফলে মার্চ মাসে যারা শিক্ষা শেষ করেছে, তারা না পারছে দেশে ফিরে যেতে, না পারছে কাজ করা অব্যাহত রেখে জাপানে বসবাসের খরচ মেটানোর মতো উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিতে।

জাপানে আজকাল প্রচুর বিদেশি খণ্ডকালীন কাজের পয়সায় জাপানি ভাষা শিক্ষার স্কুল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। মার্চ মাসে শিক্ষা শেষ করা সে রকম বড় একটি দল দেশে ফিরে যেতে পারছে না। অন্যদিকে কাজ করার অনুমতি না থাকায় বিপদ আরও বেড়েছে। আর যারা অনুমতি ছাড়া সামান্য মজুরিতে ক্যাফে, বার, রেস্তোরাঁ, ও খুচরা বিক্রির ছোট অনেক দোকানপাটে কাজ করত; ক্রেতার অভাবে সেগুলো বন্ধ হওয়ার অবস্থা।

এদের অনেকে দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আগে পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য জাপান সরকারের কাছে আবেদন জানালেও এখনো সাড়া মেলেনি। নিজ নিজ দেশের দূতাবাস অবশ্য চেষ্টা করছে দ্রুত এদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে।

সূত্রঃ প্রথম আলো 

Bootstrap Image Preview