Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোজায় সব বন্ধ রাখতে পারব না, সীমিত আকারে চালু করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৩:২৭ PM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৩:২৭ PM

bdmorning Image Preview


সামনে রোজায় সব বন্ধ রাখতে পারব না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সীমিত আকারে ইন্ডাস্ট্রি চালু করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী সোমবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের চারটি এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। এসময় জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার গার্মেন্টস চালু নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  ‘কিছু কিছু গার্মেন্ট কারখানার পণ্য রফতানির জন্য খোলা রাখতে হবে। এটাও ঠিক সামনে রোজা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারবো না। আস্তে আস্তে কিছু কিছু জায়গায় উন্মুক্ত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করার পরার্মশ দেন।
জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন,  ‘গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। বর্তমানের জেলায় ৩৫টি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিসহ মানুষের খাবার, মুরগি ও মৎস্য খাবার, পোল্ট্রি হ্যাচারি এবং ১৮টি পিপিই প্রস্তুতকারীসহ ১২০ প্রতিষ্ঠানের বিশেষ উপায় চালু আছে। বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল রফতানিমুখী অনেক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলবে বলে জানিয়েছেন। শ্রমিকদের আসার জন্য পর্যাপ্ত বাস চেয়েছেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের ১২০টি প্রতিষ্ঠানের চালু রাখতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে যদি আরও প্রতিষ্ঠান চালু হয় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের জন্য দুরূহ হবে। স্বাস্থ্যবিধি কী হবে এটা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে।’ 

লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে গাজীপুর জেলা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন,  ‘যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। চাকরি টিকিয়ে রাখতে মেয়েরা একহাতে কোলের বাচ্চা নিয়ে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে আসছে। আমরা অনেক উদার মালিক দেখেছি। যারা মার্চ মাসেই দুই মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছেন। আবার এখনও অনেক মালিক রয়েছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বেতন দিতে পারছেন না। এটা লকডাউন  নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় অন্তরায়। আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে।’  

যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিক আসায় গাজীপুর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে এমনটা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন,  ‘প্রথমদিকে গাজীপুরের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে আমরা অনেক ভালো রেখেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার পর শ্রমিকরা আসতে শুরু করলো তখন নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলো। আমাদের জেলাটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ  হয়ে গেছে। আবার যদি শ্রমিকরা এভাবে আসা-যাওয়া করেন তাহলে বেগ পেতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন,  ‘গাজীপুরে যারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন তাদের নিরাপদ রাখতে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দিক নির্দেশনা প্রয়োজন। আর গাজীপুরে অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছেন। তাদের ঘরে রাখতে হলে অবশ্যই ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।’ 

গার্মেন্ট কারখানার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীরা কিন্তু সুযোগ নিচ্ছেন। পিপিই বানানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য বানাচ্ছেন।  তারা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। কত প্রয়োজন হয় তাদের? বঙ্গবন্ধু যেমনটা বলেছিলেন আমার কৃষক আমার শ্রমিক তো চোর নয়। তারা তো কিছু চায় না। একমুঠো ভাতই তাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যাদের আছে যারা শিক্ষিত.... তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক কিন্তু এখনও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।’ 

গার্মেন্ট শিল্প চালু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ‘এটা সত্য যে কিছু কিছু শিল্প আছে যাদের পণ্য রফতানি হবে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য আছে কিছু কিছু খোলা রাখা। আর কিছু কিছু চালু করতেই হবে। বিশেষ করে আমাদের ওষুধ শিল্প, অ্যাপ্রোন থেকে শুরু করে, হেড ক্যাপ, সু ক্যাপ এগুলো যারা তৈরি করছে তাদের জন্য খোলা রাখতেই হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যেসব মালিকেরা কারখানা খুলতে চান, তারা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কীভাবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবেন তা আলোচনা করে ঠিক করতে পারেন। কারখানার মধ্যে কোনও ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে যদি তাদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়। যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা যেখানে আছে তারাও সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের কত পার্সেন্ট আসতে চায় তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তাদের আনতে হলে আনার ও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় থাকতে পারে। তাহলে তারা এটা চালু করতে পারবে। এই জিনিসটা আপনাদের দেখা উচিত এবং সেভাবে আলোচনা করা উচিত। এটাও ঠিক সামনে রোজা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারব না। আস্তে আস্তে কিছু কিছু জায়গায় উন্মুক্ত করতে হবে।

গাজীপুরে করোনা প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,  ‘গাজীপুরে এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা খুব বেশি দেখা দিচ্ছে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে ২৪ বা ২৫ তারিখে চালু করা ঠিক হবে কিনা। এটা বুঝে নিয়েই শিল্প খোলার কথা বা সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তবে বলবো না যে একদম বন্ধ থাকুক  সীমিত আকারে সেই পরিমাণ শ্রমিক আসতে হবে। তারা সেভাবে চালু করতে পারবে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এটা ঠিক করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ‘আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। এরপরে আমরা বসবো। নেতাদের (গার্মেন্ট মালিক) সঙ্গে আমি এ বিষয়ে বসবো কথা বলবো।’ 

আগেরবার হঠাৎ করে শ্রমিক আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার হঠাৎ সুপারভাইজারদের দিয়ে শ্রমিকদের দিকে নিয়ে আসলো। পরের দিনই বলেছিল চলে যাও- এটা হয়নি। এই আসা-যাওয়ায় শ্রমিকরা যে কষ্টটা পেয়েছে। যোগাযোগের সব বন্ধ, মাইলের পর মাইল হেঁটে হেঁটে এই মেয়েরা পৌঁছাইছে। এভাবে যেন আর তাদের বিড়ম্বনায় না পড়তে হয়।’

Bootstrap Image Preview