Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশের যে ২৩ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৪:৪৭ AM
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০৪:৪৭ AM

bdmorning Image Preview


গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন। ফলে শনাক্তের সংখ্যা ২১৮। নতুন শনাক্ত ৫৪ জনের মধ্যে ৩৯ জন ঢাকার অধিবাসী। আক্রান্তদের ৩৩ জন এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ইতোমধ্যে রোগটি দেশের ২৩ জেলা এবং ঢাকার ৪৬টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

এরমধ্যে উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি, বাসাবো, লালবাগে রোগী বেশি। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় সারা দেশে ৭ হাজার ৬৯৩টি পরিপূর্ণ আইসিইইউ শয্যা প্রস্তত রয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ১৬ স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা হচ্ছে। তবে প্রতিদিন সংখ্যার দিক দিয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার সারা দেশে ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের আরও অনেক বেশি পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। এক মাস আগে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ এ তথ্য তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৬৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ১৬৪টি। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী রয়েছে পাঁচজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৭ জন। এছাড়া আরও ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের বয়স ষাটের উপরে। এদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ, ২১ জন নারী। নতুন শনাক্ত ৫৪ জনের মধ্যে ৩৯ জন ঢাকার ভেতরে, একজন ঢাকার অদূরে, বাকিরা ঢাকার বাইরের অধিবাসী।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস দেশের ২৩ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ৩, চুয়াডাঙ্গা ১, কুমিল্লা ২, কক্সবাজার ১, ঢাকা ৫, ঢাকা সিটি ১২৩, গাইবান্ধা ৫, গাজীপুর ১, জামালপুর ২, কেরানীগঞ্জ ১, কিশোরগঞ্জ ১, মাদারীপুর ১১, মানিকগঞ্জ ৩, মৌলভীবাজার ১, নারায়ণগঞ্জ ৪৬, নরসিংদী ৪, নীলফামারী ১, রাজবাড়ী ১, রংপুর ১, শরীয়তপুর ১, শেরপুর ১, সিলেট ১, টাংগাইলে ২ জন। বুধবার পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন।

শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী রয়েছেন। এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ৪৬টি এলাকায় ১২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে আদাবর ১, মোহাম্মদপুর ৬, বসিলা ১, ধানমণ্ডি ৯, ঝিগাতলা ৩, সেন্ট্রাল রোড ১, গ্রিন রোড ২, শাহবাগ ১, বুয়েট এরিয়া ১, হাজারীবাগ ১, ঊর্দু রোড ১, চকবাজার ২, লালবাগ ৫, বাবুবাজার ২, ইসলামপুর ২, লক্ষ্মীবাজার ১, নারিন্দা ১, সোয়ারি ঘাট ৩, ওয়ারী ৯, কোতোয়ালি ১, বংশাল ১, যাত্রাবাড়ী ৫, পুরানা পল্টন ২, ইস্কাটন ১, বেইলী রোড ১, মগবাজার ১, বাসাবো ৯, রামপুরা ১, শাহাজাহানপুর ১, বাড্ডা ১, বসুন্ধরা ৩, নিকুঞ্জ ১, আশকোনা ১, উত্তরা ৫, গুলশান ৬, মহাখালী ১, তেজগাঁও ২, কাজীপাড়া ১, মিরপুর-১০ (২), মিরপুর-১১ (২), মিরপুর-১৩ (১), মিরপুর-১ (৮), শাহ আলী বাগ ২, পীরেরবাগ ১, টোলারবাগ ৪, উত্তর টোলারবাগে ৬ জন।

এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার ৫২টি এলাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আর, জনসাধারণের রাজধানী ত্যাগ ও প্রবেশ বন্ধে পুলিশের কঠোর অবস্থান রয়েছে। পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বসিলা, বাড্ডা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ভবন ও গলি লকডাউন করেছে প্রশাসন। রাজধানীতে ঢুকতে বা বের হতে হলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হচ্ছে, নয়তো জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অহেতুক আসা-যাওয়া বন্ধে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড ও চেকপোস্ট। উপযুক্ত কারণ ও প্রমাণ ছাড়া কাউকেই চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা সম্পূর্ণরূপে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

বুলেটিনে অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জানান, নতুন করে এ মুহূর্তে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৩৭ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৩৯ জন, কোয়ারেন্টিনে আছেন ১০ হাজার ১৫৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৬ জনকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ১১১ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৪২ জন।

এতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও সম্ভাব্য রোগীদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মহানগরে আইসোলেশন শয্যা প্রস্তত রয়েছে ১ হাজার ৫৫০টি। ঢাকা মহানগরের বাইরে দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ১৪৩টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। সবমিলিয়ে, দেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৭ হাজার ৬৯৩টি। শয্যার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও এগুলো করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারি স্থাপনাগুলোকেও নতুন করে আইসোলেশন শয্যা হিসেবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া চলছে।

সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা পিসিআর মেশিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করছি। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১৬টি স্থানে পরীক্ষা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৯১ হাজার ২৯২টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৪টি বিতরণ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মজুদ আছে ২ লাখ ২০ হাজার ৫১৮টি। দেশের বিভিন্ন পিসিআর ল্যাবে এ পর্যন্ত ২১ হাজার কিট ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের কাছে মজুদ আছে ৭১ হাজার। তিনি বলেন, সব হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা আছে ১১২টি। প্রত্যেকটি আইসিইউর সঙ্গে ভেন্টিলেটর থাকে। কোনো কোনো হাসপাতালে এর সঙ্গে ডায়ালাইসিস শয্যাও আছে। এরকম আছে ৪০টি। আমরা মনে করি, এটা আরও বাড়ানো দরকার। প্রতি মুহূর্তে এটা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষায় বর্তমানে ঢাকা ৯টি এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থানে ৭টি ল্যাব সম্পূর্ণভাবে চালু রয়েছে। এগুলো হল- ঢাকায় আর্মড ফোর্সেস ইন্সটিটিউট অব প্যাথলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আইসিডিডিআরবি, আইদেশী, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, আইইডিসিআর, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন। ঢাকার বাইরের ল্যাবরেটরিগুলোর মধ্যে রয়েছে - চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ।

এছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে ইতোমধ্যে ল্যাব প্রস্তুত হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের সেবা পেতে এবং পরীক্ষা করাতে ১৬২৬৩, ৩৩৩, ১০৬৫৫, ০১৯৪৪-৩৩৩২২২ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ তিনটি নম্বরে যোগাযোগ করলেই পরীক্ষা, আক্রান্ত হলে ভর্তি বা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব তথ্য-পরামর্শ পাওয়া যাবে।

৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। এরপর থেকে সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনার বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ছুটি বাড়ানো হয়েছে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বহিরাগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে গণপরিবহন সবই বন্ধ রয়েছে। কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতালসহ জরুরি সেবা এ ছুটির আওতামুক্ত হলেও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্রঃ যুগান্তর 

Bootstrap Image Preview