Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিয়ের পাত্রী হিসেবে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা নারীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৯:২৭ PM
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৯:২৭ PM

bdmorning Image Preview


সেন্টমার্টিনে ডুবে যাওয়া রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটির অনেক নারী বিয়ের পাত্রী হিসেবে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন। ওই ট্রলার থেকে ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদের অধিকাংশই নারী। নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১১ জন নারী, বাকীরা শিশু। 

এই পাচার প্রক্রিয়ায় জড়িতদের ধরতে রাতভর অভিযান চালিয়েছে কক্সবাজারের পুলিশ।

জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিবিসিকে বলেন, অভিযানে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই স্থানীয় বাঙালি এবং পাচারচক্রের মূল হোতা বলে পুলিশ মনে করছে।

এদের মধ্যে কেউ শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের পাচারের জন্য মালয়েশিয়া যেতে রাজি করেছে, কেউ তাদের সংগ্রহ করেছে, কেউ রয়েছে শিবির থেকে ট্রলার পর্যন্ত নিয়ে গেছে এবং কেউ এই যাত্রাপথে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কয়েকজন নৌকার মাঝিও রয়েছে আটক হওয়াদের মধ্যে।

ডুবে যাওয়া ট্রলারটি থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও দুইজনকে দালাল সন্দেহে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উদ্ধারপ্রাপ্তদের সবাইকেই টেকনাফের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্দেহভাজন পাচারকারী ছাড়া বাকীদের শরণার্থী শিবিরে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

আর নিহতদের মরদেহ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।

ডুবে যাওয়া ট্রলারে যারা ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা বলে জানাচ্ছেন সেন্টমার্টিনে নৌবাহিনীর অফিসার-ইন-চার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এস এম জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, উদ্ধারদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা যাচ্ছে তাতে, ছোট ছোট দলে ভাগ করে এদেরকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে জড়ো করা হয়েছিল টেকনাফের নোয়াখালী নামক স্থানে।

ছোট ছোট নৌকায় করে রাতের আঁধারে তাদের সেখানে আনা হয়। একেকটি দলে ছিল ১৫ জন করে। তাদের লক্ষ্য ছিল মালয়েশিয়া যাওয়া। বেশিরভাগ উদ্ধারপ্রাপ্তরাই জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেরই মালয়েশিয়ায় আত্মীয়স্বজন আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছিলেন তারা। মালয়েশিয়ায় তাদের প্রাথমিক আশ্রয়দাতা হতেন এসব আত্মীয়স্বজন।

ছোট নৌকায় করে নোয়াখালী নামক স্থানে আনার পর তাদের বড় ট্রলারটিতে তোলা হয়, যেটি শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় সেন্টমার্টিনে নিমজ্জিত অবস্থায়। এটি ছিলো একটি মাছধরা ট্রলার। ভেতরে ছিল প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা জাল।

সেন্টমার্টিনে নৌবাহিনীর অফিসার ইন চার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এস এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি উদ্ধারদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে এরা মাথাপিছু চল্লিশ হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন দালালকে।

তবে কক্সবাজারে পুলিশের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বলছেন, এদের সবাইই যে অর্থ ব্যয় করে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন সেটা বলা যাবে না। খেয়াল করে দেখবেন, প্রচুর পরিমাণে তরুণী ছিল ট্রলারটিতে। এরা মূলত যাচ্ছিল তাদের হবু স্বামীদের কাছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় যেসব রোহিঙ্গা যুবক রয়েছেন, তারা অনেক সময় বিয়ের জন্য পাত্রী পান না। তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেরা ব্যয় বহন করে রোহিঙ্গা তরুণীদের নিয়ে যান বিয়ের জন্য। ক্যাম্প থেকে এভাবে বিয়ের জন্য পাত্রী নিতে কন্যার বাবাকেই যৌতুক দেয় পাত্ররা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারীদের বিয়ের পাত্রী হিসেবে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগ্রহের প্রবণতা নতুন নয়। 

গত বছর টেকনাফের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া শত শত নারীকে আটক করে আবার ক্যাম্পে ফিরিয়ে এনেছিল বিজিবি, যারা বিয়ে করার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার উপক্রম করেছিলেন।

ওই সময় একজন রোহিঙ্গা তরুণী বিবিসিকে বলেছিলেন, তারা গরীব হওয়ার কারণে ভালো থাকার এটাই সেরা উপায় বলে তিনি মনে করেন। তিনি নিজেও বিয়ে করার জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, যাবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কপালে নেই।

সে সময় বিজিবির কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছিলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে অনেক তরুণীর স্বামী মারা যাওয়ার কারণে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে পুরুষের চাইতে নারীর সংখ্যা বেশি। ফলে তাদের বিয়ের উপযুক্ত পাত্রের সংখ্যা কম থাকায় তারা মালয়েশিয়ার যেতে আগ্রহী থাকেন।

ওদিকে মালয়েশিয়ায় যেহেতু বিয়ের উপযুক্ত রোহিঙ্গা পুরুষের জন্য পাত্রীর সঙ্কট আছে, তাই তাদের কাছেও টেকনাফের ক্যাম্পের তরুণীদের চাহিদা থাকে।

এই দ্বিপাক্ষিক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার কারণে গত বছর থেকেই শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবপাচারকারী চক্রগুলোর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

Bootstrap Image Preview