বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। মানুষের মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত এক হাজার একশ ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৪৪ হাজারের অধিক।
গোটা বিশ্ব যখন মহামারি এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত, ঠিক তখনই প্রাণঘাতী করোনা নিরাময়ের ভবিষ্যৎ বাণী করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আগামী এপ্রিল মাসে গরম আসার সঙ্গে সঙ্গেই করোনার প্রাদুর্ভাব চলে যাবে। যদিও নিজের এমন দাবির পেছনে তিনি যথাযথ কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেননি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, চলতি সপ্তাহেই আমি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বলেছি যে, এপ্রিল মাসের দিকে করোনা ভাইরাস এমনিতেই চলে যাবে। কেননা তখন গরমকাল আসবে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এ ধরনের ভাইরাস এমনিতেই টিকতে পারে না। যা ভীষণ ভালো একটি দিক, আর তা ঠিক তখনই সম্ভব।
যদিও ট্রাম্পের এই গ্রীষ্মকালীন তত্ত্বের সঙ্গে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। টেক্সাসের বেলর কলেজ অব মেডিসিনের ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ডিন ড. পিটার হোটেজ বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, গ্রীষ্মের সময় এসব ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাবে এটা মেনে নেওয়া হবে খামখেয়ালি ব্যাপার। কেননা এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো মিল নেই।
তাছাড়া ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম শ্যাফনারের মতে, ট্রাম্পের আশাই আমাদের আশা। যদিও করোনা ভাইরাস গরমকালে চলে যাবে এ ধরনের কোনো জ্ঞান আমাদের জানা নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতসহ বেশকিছু দেশে অজ্ঞাত এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তাছাড়া আতঙ্কে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানও। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই সম্প্রতি চীনে ভ্রমণ করেছেন কিংবা সেখানে বসবাস করেন।
এমনকি সিঙ্গাপুরে দুই বাংলাদেশির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুইজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।