Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রাণীদেহ থেকেই জন্মাচ্ছে ৮০ শতাংশ নতুন রোগ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:৪৪ PM
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:৪৪ PM

bdmorning Image Preview


বিশ্বজুড়ে নতুন এক আতঙ্কের নাম নভেল করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যার নাম দিয়েছে ২০১৯-এনসিওভি। নতুন এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোন প্রাণী থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে তা এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যে রোগগুলো ছড়াচ্ছে তার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের উৎস হচ্ছে বিভিন্ন পতঙ্গ ও জীবজন্তু।   

গত বছর বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত এক ইস্যু ছিল ডেঙ্গুজ্বর। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। দেশের ইতিহাসে কোনও একক রোগে আক্রান্ত হয়ে এত মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজির নেই। যদিও এই সরকারি সংখ্যা বেসরকারি হিসেবের চেয়েও অনেক কম। মশাবাহিত আরেক ভয়ঙ্কর রোগের নাম চিকুনগুনিয়া। মশাবাহিত আরেক রোগ জিকা। আবার খেজুরের কাঁচা রস পানে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এই নিপাহ ভাইরাসের উৎস হলো বাদুড়। এই রোগে আক্রান্ত হলে এখনও কোনও চিকিৎসা নেই। ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ ভাগ।

কয়েক বছর আগে বিশ্বজুড়ে ইবোলা ছড়িয়ে পরে। ধারণা করা হয় এটিও  বাদুড় থেকেই এসেছে। প্রথমে বন্য প্রাণী থেকে এবং পরে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়িয়েছে। ইবোলার মতোই মারবুর্গ ভাইরাস, যার প্রাথমিক উৎস হিসেবে বাদুড়কেই ভাবা হয়। সেখান থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে। এতে আক্রান্ত হলে আট থেকে নয় দিনের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে। আবার মার্স ( মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) এসেছে উট থেকে। মার্সের আরেক গ্রোত্রভুক্ত সার্স ( সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি) এসেছে বাদুর থেকে।

আবার ২০১৩ সালে শনাক্ত হওয়া নোরো ভাইরাস ছড়িয়েছিল পাখির মাধ্যমে। ২০০০ সালে লেপটোসিরোসিসের উৎস হিসেবে ইঁদুরের প্রস্রাবের কথা জানান বিশেষজ্ঞরা। আবার সোয়াইন ফ্লু মূলত শুকরের রোগ হলেও,তাতে আক্রান্ত হয়েছে মানুষও।

সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর) জানিয়েছে, গত ২৫ বছরে বিশ্বে যোগ হয়েছে ৩৫টি নতুন রোগ। আর প্রতি ৮ মাসে পৃথিবীতে একটি করে নতুন রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব রোগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের জন্ম বিভিন্ন প্রাণী থেকে। ১০ বছর আগে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ( ইউএস-সিডিসি) সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথের সহকারী পরিচালক পিটার বি ব্লোল্যান্ড জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ জীবাণু দ্বারা মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে যার ৬১ শতাংশের উৎস প্রাণিজগৎ।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান,আমাদের স্বাস্থ্যবার্তায় অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আর সেটা কেবলমাত্র নভেল করোনা ভাইরাসের কথা চিন্তা করেই নয়। নভেল করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে কোনও প্রাণীর মধ্যে নেই। কিন্তু শতকরা ৭৫ ভাগ রোগের সঙ্গে পশুপাখির সম্পৃক্ততা থাকে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশাল মেডিসিন ( নিপসম) এর পরিচালক  ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন প্রাণী থেকে ছড়ানো রোগগুলোকে বলা হয় ‘জুনোটিক ডিজিজ’। এসব রোগের অন্যতম প্রধান কারণ, জীবজন্তু, পশুপাখির সঙ্গে মানুষের সংশ্রব অনেক বৃদ্ধি পাওয়া। খাদ্যাভাস এবং খাদ্যের ওপর মানুষের অধিকার অনেক বেশি সংরক্ষিত বলেই এসব প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংস্রব বেড়েছে।

ডা. বায়েজীদ খুরশীদ আরও বলেন, মানুষ এখন বাণিজ্যিকভাবে কুমির এমনকি গুইসাপও উৎপাদন করছে,সাপ পুষছে। এসবও জুনোটিক ডিজিজের অন্যতম কারণ। আবার বিশ্বজুড়ে মানুষের যাতায়াত যত বাড়ছে সেইসঙ্গে অসুখও বাড়ছে। বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। মানুষের মধ্যে পাখি পোষার প্রবণতা বেড়েছে। আর এসব প্রাণী উৎস হলেও  ভাইরাসগুলো চরিত্র অনুযায়ী এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পশুপাখি, জীবজন্তু থেকেই গত কয়েক দশকে রোগ বেশি হচ্ছে। আর মানুষ যদি এসবের সংস্পর্শে আসে তখন সেটা মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে বনে-জঙ্গলে যেগুলো থাকে সেগুলোতো মানুষের সংস্পর্শে না এলে রোগ হবে না। পশু-পাখি,জীবজন্তুর ভেতরে প্রাকৃতিকভাবেই এসব ভাইরাস থাকে, কিন্তু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে গেলেই সেটা মুশকিল। তখন সেটা ‘ম্যান টু ম্যান ট্রান্সমিশন’ হচ্ছে সর্দি কাশি, হাঁচি বা ক্লোজ কন্টাক্টের মাধ্যমে।

গত ২৫ বছরে আসা নতুন রোগের বেশিরভাগই ভাইরাল ডিজিজ। আর এগুলো সবই পশুপাখি, জীবজন্তু থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এর অন্যতম কারণ শহরায়ন। বনের গাছপালা কাটা হচ্ছে, যার কারণে এসব বনের জীবজন্তু বা পশুপাখির বেশি কন্টাক্ট হচ্ছে মানুষের সঙ্গে। হঠাৎ করে যখন এসব পশুপাখি বা জন্তু থেকে ভাইরাস মানুষের শরীরে চলে আসে তখন মানুষের শরীরে সেসব ভাইরাসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকার কারণে ‘‘আউটব্রেক’ হয়। তিনি বলেন,আমাদের দেশেও বিভিন্ন বাজারে পশুপাখি জীবন্ত বিক্রি হয়।এ ধরনের আউটব্রেক আমাদের দেশে হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ সম্পর্কে কৌশল নির্ধারণ করা দরকার।

Bootstrap Image Preview