Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্মচারীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ

পংকজ কুমার, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৯:৫৫ PM
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৯:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


পংকজ কুমার, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি-

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কুলাউড়-আখাউড়া জোনে কর্মরত এই ব্যক্তি এল সি ডাব্লিও ম্যান পদে কর্মরত। তার নাম রবিউল আউয়াল। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য এবং রেলওয়ের মূল খুঁটি থেকে দোকান, রেললাইনের পাশের বস্তিগুলোতে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে জংশনে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা রবিউল আওয়াল অবৈধ এসব বিদ্যুৎ সংযোগের মূল হোতা। তিনি প্রতি মাসে নিজে রেল কলোনির সব অবৈধ সংযোগ ব্যাবহারকারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করেন। প্রতিটি অবৈধ সংযোগ থেকে প্রতি মাসে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা পর্যন্ত বিল নেওয়া হয়। এভাবে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু এ চক্রের প্রধান রবিউল আউয়াল। আর অতিরিক্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করছে খোদ বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ (সরকার)। এতে লোকসানের মুখে পড়ছে দেশের রেল বিভাগ।

রেলওয়ে স্টাফ কলোনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রেলের নিজস্ব ভূমিতে রেলের নিজস্ব বাসা ছাড়াও সেখানে অনেক বাসাবাড়ি-দোকানপাট গড়ে উঠেছে। রেলকলোনিতে গড়ে ওঠা ঐসব স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বেকারিতে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মচারী জানান, অবৈধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের বাসাবাড়িতে নিয়মিত বৈদ্যুতিক চুলা (হিটার) ব্যবহার করে। রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা এসব অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরেক অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী বলেন, "বিদ্যুৎ ছাড়া কীভাবে চলব? তাই বিদ্যুৎ বিভাগের লোক দিয়ে বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছি। মাসে ছয়শ টাকা দিতে হয়।"

অনুসন্ধানে জানা যায়, রেলওয়ে কুলাউড়া-শ্রীমঙ্গল জোনের বিদ্যুৎ বিভাগের এল সি ডাব্লিও ম্যান রবিউল আওয়াল একটি রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর এই রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব ব্যবহার করেই বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। অথচ প্রতিমাসে সরকারের রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কারনে, মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে লক্ষ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।

সরেজমিন রেলওয়ে স্টেশন ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রেলওয়ে বিদ্যুতের মূল লাইন (খুঁটি) থেকে অবৈধভাবে লাইন টেনে রেলওয়ে প্লাটফর্মের দোকানসহ পাশের বস্তি এমনকি রেলস্টেশনের সন্নিকটে নতুন বাজার সোনার বাংলা মার্কেটের পাশের বস্তির প্রায় সাতটি বাড়িতে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

বস্তির আরেক অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী বলেন, ‘আমাদের পল্লীবিদ্যুতের মিটার নেই। আমরা সরকারি লাইন ব্যবহার করি আর প্রতিমাসে রবিউল স্যারকে পাঁচশ টাকা করে দিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা না। এই বস্তির বেশিরভাগ বাড়িতেই সরকারি লাইন ব্যবহার করা হয় আর রবিউল স্যার বিল নেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে প্লাটফর্মের এক দোকানদার বিডি মর্নিংকে বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে বিল দিই দুই হাজার টাকা। রবিউল আউয়াল আমাদের কাছ থেকে এই বিল নেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের রবিউল আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিমর্নিং এর প্রতিনিধির কাছে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে প্রতিমাসে দুই তিন লাখ টাকা বিল আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এ সেক্টর থেকে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা পাই। সেই টাকা বিভিন্ন বসদের পেছনে খরচ করতে হয়, আমিও পাই।’

অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এই রবিউল আউয়াল। এই নিয়োগ বাণিজ্য থেকে তিনি অর্ধেক কমিশনও পান। নিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিউল আউয়াল বিডিমর্নিং'কে জানান, রেল বিভাগের দুইজনকে তিনি আর্থিক চুক্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন।

এর মধ্যে একজন গত দুই বছর হয় চট্টগ্রামে রেল বিভাগে কেরানি পদে চাকরি করছেন। সাতগাঁও স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিডিমর্নিং'কে বলেন, ‘রবিউল আমাকে বলেছে মৌলভীবাজার জেলায় চারজন লোক নেওয়া হবে কেরানি পদে। আমাকে লোক দেন। তখন আমি এ বিষয় নিয়ে মিজানের বাবার সঙ্গে কথা বলি।’

স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যতদূর জানি মিজানের পরিবার খুব দরিদ্র, সুদে টাকা এনে এরইমধ্যে রবিউল আউয়ালের চুক্তির বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করেছে মিজানের বাবা ইমাম শাজাহান মিয়া।’

স্টেশন মাস্টার আরও বলেন, ‘আর বড় জোর বিশ ত্রিশ হাজার টাকা বাকি আছে।’ একপর্যায়ে এ বিষয়ে রবিউলের সঙ্গে আলাপ না করার জন্য অনুরোধ করেন সাতগাঁও স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম। তিনি মিজানের নিয়োগে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার মাধ্যমেই মিজানকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চুক্তি হয় রবিউলের সঙ্গে।’

এদিকে চট্টগ্রামে কেরানি পদে কর্মরত মিজানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মিজান জানায়, "রবিউল আমার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছে এবং চাকরি পাইয়ে দেবে বলে দশ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার চাকরি আমার যোগ্যতায় হয়েছে।"

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শ্রীমঙ্গল-আখাউড়া জোনের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আল আমিনের মুঠোফোনে তিন দিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, "আমি এখন ছুটিতে আছি। ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিয়েই, রবিউলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে খতিয়ে দেখব। বিদ্যুতের বিষয়টি যেহেতু আমার দায়িত্বে তাই কেউ দুর্নীতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আর রবিউলের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে সেটিও তদন্তের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

Bootstrap Image Preview