Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নীল নদই কি ফেরাউনের সমাধিস্থল ?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:২৪ PM
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০, ০৫:২৪ PM

bdmorning Image Preview


ইজিপ্ট বা মিসর সম্পর্কে আকর্ষণ রয়েছে তামাম দুনিয়ার ইতিহাসসচেতন আর ভ্রমণপিপাসু সব মানুষের। বহু মানুষের কাছে এটি এক রহস্যময় জগৎ। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নিল নদ, সিনাই পাহাড়, সাহারা মরুভূমি আর সুয়েজ ক্যানেলের দেশ মিসর। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্য জনপদেরও একটি এই মিসর। ফারাওদের রাজকীয় পিরামিড, রানি নেফারতিতির সমাধিস্থল, মিসরীয় চিত্রলিপি আর প্যাপিরাস কাগজে লেখা অজস্র পুঁথি আজও ধরে রেখেছে পাঁচ সহস্রাব্দের প্রাচীন সভ্যতাকে।

এত প্রাচীন আর এত সমৃদ্ধ সভ্যতা পৃথিবীর অন্য কোথায়ও আছে বলে আমি জানি না। মমি, পিরামিড আর নবী মুসা (আ.)-এর নাম জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে ভুলে থাকার কথা তো ভাবাই যায় না। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক! আজ আমরা কথা বলতে চাই পাঁচ সহস্রাব্দের প্রাচীন সভ্য জনপদ; ছয় হাজার ৭০০ কিলোমিটারজুড়ে বয়ে চলা নিল নদের দেশ মিসরের এক অভিশপ্ত শাসক ফেরাউনকে নিয়ে। আলোকপাত করতে চাই কালের বিবর্তনে মানবমনে বদ্ধমূল হয়ে থাকা এক ভ্রান্ত ধারণার সঠিক তথ্য।

আমরা অনেকেই শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে টগবগে যৌবনের যবনিকা টানার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি ফেরাউনের নিল নদে ডুবে মরার অলীক গল্প শুনে। নিজেদের জ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটিয়েছি বিভিন্ন গ্রন্থে ফেরাউন তাঁর দলবলসহ মিসরের নিল নদে ডুবে মরার অন্তঃসারশূন্য চাঞ্চল্যকর তথ্য পড়ে। কিন্তু ভৌগোলিক বাস্তবতা কী? মহাগ্রন্থ আল কোরআন কী বলে? তা কি কখনো ভেবেছি? অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি?

চলুন দেখে আসি কোরআন কী বলে; পবিত্র কোরআনের সুরা শুআরায় বলা হয়েছে : ‘অতঃপর আমরা মুসার প্রতি ওহি অবতীর্ণ করলাম যে আপনার লাঠি দ্বারা সাগরে আঘাত করুন। ফলে তা বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মতো হয়ে গেল। (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৬৩) এখানে মহান আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)-কে লাঠি দ্বারা সাগরে আঘাত করতে বলেছিলেন। যার জন্য তিনি আয়াতে আরবি ‘বাহর’ শব্দ প্রয়োগ করেছেন। যেহেতু কোরআনে কারিমে স্পষ্ট করে ‘বাহর’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং কোনোভাবেই সেটি দ্বারা নিল নদকে বোঝায় না। নিল নদকে কোনো যুগে কোনো আলেম বা ঐতিহাসিকরা সাগর বলেননি। কিংবা এটিকে পৃথিবীর কোনো ভাষায় সাগর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ মেলে না।

এবার আসুন একটু ভৌগোলিক বিশ্লেষণে আসি। মুফাসসিরিনে কেরামের এ কথার ওপর ঐক্য রয়েছে যে এখানে যে সমুদ্রের কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে লোহিত সাগর। কারণ বিশ্ব মানচিত্র অবলোকনে এ কথা খুব সহজেই বোধগম্য হয় যে মিসরের পাশে এই লোহিত সাগর ছাড়া অন্য কোনো সাগর নেই। আর এই সাগর অতিক্রম করেই মুসা (আ.) তাঁর অনুসারী বনি ইসরাঈলদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে গিয়েছিলেন। মিসর থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথও এই লোহিত সাগর দিয়েই অতিক্রম করেছে।

আর নিল নদ হচ্ছে একটি নদ যা ফেরাউনের যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ‘নাহারুন নিল’ নামে পরিচিত। একে কোনোভাবেই সাগর বলার সুযোগ নেই। এ ছাড়া নিল নদ হচ্ছে মিসর থেকে সুদানে যাওয়ার পথ; সিরিয়ার নয়।

সুতরাং এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে মহান আল্লাহ আয়াতে সাগর বলে এই লোহিত সাগরকেই বুঝিয়েছেন। যেটির পূর্ব নাম ছিল ‘বাহার আল কুলজুম’। পরবর্তী সময় এটিকে ‘রেড সি’ বা ‘লোহিত সাগর’ বলে নামকরণ করা হয়েছে।

তাই এখানে ঐতিহাসিকভাবেই এটি প্রমাণিত সত্য যে মুসা (আ.) এই লোহিত সাগর দিয়েই তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে রওনা হয়েছিলেন। আর ফেরাউন তাঁর পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে লোহিত সাগরের অথৈ জলরাশির বুকেই তাঁর বিশাল সৈন্যদলসহ সলিলসমাধির শিকার হয়েছিলেন। এটিই বিশুদ্ধতম মত। এটিই প্রমাণিত সত্য। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য বোঝার ও জানার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Bootstrap Image Preview