Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঠাণ্ডা জ্বর নিয়ে করোনা ভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে চীনফেরত ৩ বাংলাদেশি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:১৫ PM
আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:১৫ PM

bdmorning Image Preview


১০৬ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে চীন থেকে আসা ৩৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক যুবককে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনফেরত আরো দুই বাংলাদেশিকে রাজধানীর অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত বুধবার। তাঁদেরও স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন দিন আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একজন চীনা নাগরিকের স্যাম্পল টেস্টের রেজাল্ট দেওয়া হয় গতকাল। তবে কারো ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে কোনো হাসপাতালের নাম প্রকাশ করেননি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, একটি হাসপাতালে একজন চীনফেরত যুবক ভর্তি হয়েছিলেন বেশি মাত্রায় জ্বর নিয়ে; কিন্তু এখন তিনি ভালো আছেন। তাঁর জ্বর ১০৬ থেকে ১০০ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে।’ অন্য কোনো হাসপাতালে কারো ভর্তি থাকার বিষয় নিশ্চিত করেননি তিনি।

এদিকে নিজের শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে গত কয়েক দিনে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরে এসে কয়েক ব্যক্তি স্যাম্পল পরীক্ষা করিয়েছেন। এর মধ্যে যাঁদের রেজাল্ট দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কারোরই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। অন্যদের রেজাল্ট এখনো হয়নি। তবে ঠিক কতজনের স্যাম্পল পরীক্ষা হয়েছে এর কোনো সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। ওই প্রতিষ্ঠানের অন্য সূত্রগুলোও গণমাধ্যমকে এ সংখ্যা জানানোর ক্ষেত্রে রাখঢাক করছে। যদিও এ পর্যন্ত ২৫ জন করোনাভাইরাসসংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করেছেন বলে আইইডিসিআর গত রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে কাউকে বিব্রত করতে চান না

এদিকে গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। চীন থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তাঁদের আমরা নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তবে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা বাংলাদেশে আসতে চান না।’ কেন আসতে চান না—প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তাঁরা বলেছেন, নিজ দেশে এসে কাউকে বিব্রত করতে চান না। তাঁদের কারণে যদি কেউ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়, কিংবা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সারা জীবন এর জন্য নিজেকে দোষী মনে হবে।’ যে ৩৭০ জন বাংলাদেশি ফিরে আসছেন, তাঁদের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আর তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চীন সরকার বলেছে, যেসব বাংলাদেশি সেখানে থাকতে চান, তাঁদের সব ধরনের সেবা-খরচ চীন সরকারই বহন করবে। তবে আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত।’

প্রস্তুত দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল

বিডিএফ সম্মেলনে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত। তিনি বলেন, ভাইরাসটি যেন দেশে না আসে তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। যদি কোনো কারণে চলে আসে, তাহলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড খেলা হয়েছে। ঢাকাসহ সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া আইইডিসিআরের পরিচালক জানিয়েছেন, এখন থেকে পর্যায়ক্রমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা সব ফ্লাইটের যাত্রীদেরই স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হবে। গত কয়েক দিন শুধু চীন থেকে আসা চারটি উড়োজাহাজের যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হয়েছিল। এখন থেকে তা সব যাত্রীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডা. মিলন হলে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির আয়োজনে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবসংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, এ মুহূর্তে স্ক্রিনিং ছাড়া কাউকেই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি স্ক্যানিং মেশিন রাখা আছে। এর একটি ভিআইপি প্রবেশদ্বারে, একটি সাধারণ প্রবেশদ্বারে এবং অন্যটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্থল ও নৌবন্দরেও স্ক্রিনিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দরসংলগ্ন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আলাদা আইসোলেটেড কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রতিটি যাত্রীর জন্য একটি করে করোনাভাইরাস নির্দেশিকা গাইড রাখা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর সময় আমাদের চিকিত্সকরা যেভাবে সফলতা দেখিয়েছেন, তা বিশ্বে বিরল।’

চীন থেকে আসাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা

চীন থেকে আসা যাত্রীদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীন থেকে দেশে যেসব ফ্লাইট আসছে, সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের দিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। এসব যাত্রীকে বিমানবন্দরেই থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘চীনের নাগরিকরা বাংলাদেশের যেসব প্রকল্পে কাজ করছেন, সেখানে তাঁদের বিশেষ নজরে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ তাঁরা অনেকেই নতুন বছরে নিজ দেশে গেছেন, যাঁরা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। সুতরাং বিদেশ থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।’

Bootstrap Image Preview