কৌশলে ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন রাজশাহীর প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাহেব বাজার শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুর ইসলাম ফয়সাল। মোটা অঙ্কের এই পুরো টাকাই তিনি খুইয়েছেন আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
জবানবন্দিতে তিনি আদালতকে জানান, আন্তর্জাতিক জুয়ার অ্যাপ ‘বিট ৩৬৫’-সহ ক্রিকেট বেটিং-এ জড়িয়ে তিনি গত দুই বছরে ধীরে ধীরে ব্যাংকটির ভল্ট থেকে আমানতের ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। যার পুরোটাই তিনি জুয়ার বোর্ডে হেরেছেন।
পরে জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকটির ভল্টে থাকা অর্থ গণনার সময় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। পরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সেলিম রেজা খান বাদী হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।
প্রথমদিকে অভিযুক্ত ফয়সাল জানান, এই অর্থ তিনি নিজের নামে জমি কিনতে ও দুই বন্ধুকে ধার হিসেবে দিয়েছেন। পরে রিমান্ড শেষে ফয়সাল স্বীকার করেন, তিনি জুয়া খেলে মোটা অঙ্কের এই টাকা হারিয়েছেন।
এ দিকে, টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলমের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলটি ইতোমধ্যেই রাজশাহীতে এসে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলম দৈনিক অধিকারকে জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফয়সাল একাই রয়েছে, না কি ব্যাংকের আরও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ভল্টে টাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তত দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রিমিয়ার ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ শামসুর ইসলাম ফয়সালের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে সফলভাবে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সচ্ছল ঘরের সন্তান ফয়সাল অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। চাকরির পাশাপাশি তিনি নগরীর রাণি বাজার এলাকায় ‘ওয়েভ এডুকেয়ার’ নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। মোট চার বন্ধু মিলে তারা ওই কোচিংটি পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।