Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রামে কাঠমিস্ত্রির প্রেমে ঘর ছাড়লেন দুবাইপাস ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষিকা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:৫২ PM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০২০, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রথম পরিচয়। তারপর কথাবার্তা, বন্ধুত্ব ও প্রেম। আর সেই প্রেমের সূত্র ধরেই স্বামী-সন্তান রেখে ৩০ বছরের শিক্ষিকা চলে গেল ১৮ বছরের কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানা এলাকায়।

জানা যায়, টুম্পা খাতুন (ছদ্মনাম)। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি লেখাপড়া করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। টুম্পার স্বামী ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেন (ছদ্মনাম) লন্ডন থেকে এমবিএ পাস করে দেশেই ব্যবসা করছেন। টুম্পা-সোহাগ দম্পতির সংসারে একটি সন্তান রয়েছে।

উচ্চশিক্ষিত আর ধনী পরিবারের গৃহবধূ টুম্পা খাতুন হঠাৎ বাসা থেকে উধাও। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এই শিক্ষিকাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে, স্ত্রী টুম্পাকে হারিয়ে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে হাজির হন স্বামী সোহাগ হোসেন। এরপর শুরু হলো গোয়েন্দা অভিযান।

গোয়েন্দা পুলিশ অভিযানের শুরুতেই জানতে পারে, নিখোঁজ ওই শিক্ষিকা চট্টগ্রামে নগরীতে আর নেই। গোয়েন্দারা প্রযুক্তিগত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, ওই শিক্ষিকা টুম্পা চট্টগ্রাম ত্যাগ করার সময় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন।

প্রযুক্তিগত তথ্যাদির সহায়তায় টুম্পার অবস্থান সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যশোর উদ্দেশ্যে রওনা দেন গোয়েন্দারা। যশোরে পৌঁছে একটি আবাসিক হোটেল থেকে ওই শিক্ষিকাকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন গোয়েন্দা সদস্যরা।

সেখানে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই শিক্ষিকার সঙ্গে যশোরের যুবক কাঠমিস্ত্রি তারিকুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এই ফেসবুক তারিকুলের ডাকে তিনি সাড়া দিয়েছেন। কাউকে কিছু না বলে চলে যান যশোর।

গোয়েন্দারা তাদের সম্পর্কের গভীরতা জানার চেষ্টা করে পরে জানতে পারেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা টুম্পা ভদ্র পরিবারের মেয়ে। আর তিনিই কিনা একজন কাঠমিস্ত্রির খপ্পরে পড়েছেন!

ফেসবুক প্রেমিক তারিকুল প্রায়ই নানা অজুহাতে টুম্পার কাছ থেকে টাকা চাইতেন, আর টুম্পাও তাকে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। প্রেমের টানে একপর্যায়ে নিজেই চলে যান বখাটে তারিকুলের কাছে। অবশ্য, তারিকুলই যশোর যাওয়ার জন্য টুম্পার টিকিটের ব্যবস্থা করেন। আর সেই টাকাও টুম্পা আগেই তারিকুলের কাছে পাঠান।

টুম্পাকে যশোর নিয়ে যাওয়ার পর তারিকুল ইসলাম একটি আবাসিক হোটেলে রাখেন তাকে। আর পরিকল্পনা করছিলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার করে দেওয়ার। কিন্তু, গোয়েন্দারা এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে টুম্পাকে উদ্ধার করায় তাকে আর পাচার করা যায়নি।

কিন্তু, এ ঘটনায় জড়িত প্রেমিক তারিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। ওই ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তারিকুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল শিক্ষিকার বয়স ছিল প্রায় ৩০ বছর। তিনি ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন ১৮ বছরের এক কাঠমিস্ত্রির সঙ্গে। যশোর পৌঁছার পর যখন ওই যুবকের সঙ্গে দেখা হয়, তখনই তিনি বুঝতে পারেন তিনি ফাঁদে পা দিয়েছেন। যে তরুণকে তিনি ফেসবুকে দেখেছিলেন, সেই যুবক আর সামনে দেখা যুবকের অনেক তফাৎ। অর্থাৎ, ওই যুবক ছদ্ম পরিচয়ে শিক্ষিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ওই শিক্ষিকাকে উদ্ধার করতে আর কিছুটা বিলম্ব হলে ভারতে পাচার করে দেয়া হতো তাকে। পাচারের সব ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি পাচারের আগেই ভাগ্যক্রমে উদ্ধার হন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব করতেও সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সুযোগ সন্ধানীরা ভার্চুয়াল বন্ধু হয়ে স্বার্থ হাসিল করতে পারে। এতে বাস্তব জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাই সবারই আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।’

Bootstrap Image Preview