Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঢাবিতে সীমান্তে নিহত তিন বাংলাদেশির গায়েবানা জানাজা, বিক্ষোভ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৬ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৬ PM

bdmorning Image Preview


ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত তিন বাংলাদেশী নাগরিকের স্মরণে গায়েবানা জানাজা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই গায়েবানা জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় শতাধিক নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একের পর এক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এ সময় বক্তারা স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ কর্তৃক খুনের প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি তারা সীমান্তে খুনের পেছনে দেশের সরকারের অবহেলাকে দায়ী করেন।

এ সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক খন্দকার রাকিব বলেন, বাংলাদেশে ৫ লক্ষাধিক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ ভারতীয়রা এদেশে চাকরি করে দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ভারত আমাদের মেরুদণ্ডহীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে চুক্তি করেছে। সেসব চুক্তিতে ভারত ষোলআনা সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের সামনে মুলো ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিনা বিচারে, বিনা অপরাধে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে আহত করেছে তারা। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে ভারত আমার দেশের নাগরিকদের কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে হত্যা করছে। এর কোন প্রতিকার বাংলাদেশ সরকার করছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানায়।

গায়েবানা জানাজার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ মিছিলে ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা’, ‘সিকিম বা ভুটান নয়, এটা সোনার বাংলাদেশ’, ‘দালালি আর করিস নারে, পিঠের চামড়া থাকবে নারে’, ‘ভারতের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘সীমান্তে হত্যা কেন? শেখ হাসিনা জবাব দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে যেন হত্যা থামছেই না। দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হচ্ছে সময়ে সময়ে। বৈঠকের পরে বার বার প্রতিশ্রুতির পরও থামছে না বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ড।

বিজিবি ও প্রশাসনের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ২৩ দিনে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এরমধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত হয়েছেন ৬ জন, নওগাঁয় ৩, যশোরে একজন এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তেও ঘটেছে পাঁচটি হত্যাকাণ্ড। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের।

গত এক বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ'র হাতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির সংখ্যা তিন গুন বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্র। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী- বিএসএফ'র হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৮ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে ৩৩ জন গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে এবং বাকি ৫ জনকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে।

অথচ এর এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে সীমান্তে এমন প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ১৪ জন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে প্রাণহানির সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।

সবশেষ গত ২৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি- বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে আশ্বাসও দেয় বিএসএফ। তারপরও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা। বিজিবির পক্ষ থেকে একের পর এক প্রতিবাদ ও পতাকা বৈঠকের পরও হত্যা বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

Bootstrap Image Preview