Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এই বুঝি কেউ বোমা ছুঁড়লো, অতর্কিতে গুলি করলো-আশরাফুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২০, ০১:০০ PM
আপডেট: ২৩ জানুয়ারী ২০২০, ০১:০০ PM

bdmorning Image Preview


গতকাল রাতেই লাহোর উড়ে গেছে ক্রিকেট দল। সব  ঠিক ঠাক বাংলাদেশ সময় রাত বারোটার আগেই লাহোর বিমান বন্দরে পৌঁছে যান রিয়াদ, তামিম, লিটন, সৌম্য, মোস্তাফিজরা।

পিসিবির তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার কথা। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষক দলও সরেজমিনে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনও পাকিস্তানের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ‘বেশ ভাল’ বলে মন্তব্য করেছেন। মোটকথা, নিরাপত্তা ঝুঁকি কম বলেই ধরা হচ্ছে পাকিস্তানে।

কিন্তু তারপরও একটা চাপ, অস্ফুট সংশয়, শঙ্কা আছে কম-বেশি সবার মনে। যে ১৫ ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তা সাথে যাচ্ছেন, তাদের পরিবারের মাঝেও একটা বাড়তি উদ্বেগ কাজ করছে, ‘কি জানি কি হয়। এই বুঝি কোন দুঃসংবাদ শুনতে হচ্ছে!’- এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে।

কেন করবে না, পাকিস্তানের নাম শুনলে যে কারো বুক কাঁপে! দেশটি যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারান্য! এখন পাকিস্তান বলতেই বোঝায়, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের অবাধ বোমবাজি-গোলাগুলিতে অকাতরে প্রাণনাশ। আজ করাচি, কাল লাহোর, পরশু পেশোয়ার, তারপরদিন মুলতান, আরেক দিন ফয়সলাবাদে বোমা বর্ষণ হচ্ছে, সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলায় শতশত জীবন নাশের ঘটনা ঘটেই চলছে। এইতো অল্প কদিন আগে কোয়েটায় ১৪/১৫ জন নিহত হয়েছে এক বোমা হামলায়।

তবে এটা ঠিক যে, এক যুগ আগে যখন বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে শেষবার খেলতে গিয়েছিল, তখনকার অবস্থা এক কথায় এত খারাপ ছিল না। এখনকার মত এত মৃত্যু ঝুঁকিও ছিল না। এখন যেমন বোমাবাজি আর সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণনাশের ঘটনা প্রায় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন পরিস্থিতি এতটা চরম আকার ধারণ করেনি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে দুবার গিয়েছিল পাকিস্তান। প্রথমবার ২০০৮ সালের এপ্রিলে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে। পরের বার জুনে মাসে এশিয়া কাপে। তবে আর যাই হোক পাকিস্তান মৃত্যুকুপে পরিণত হয়নি তখন। করাচি, লাহোর, মুলতান, ফয়সলাবাদ, পেশোয়ার কিংবা কোয়েটার নাম শুনলে এখনকার মত বুক কাঁপতো না। তখন মাঝে-মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতো।

তবে তাই বলে তখনো কিন্তু পাকিস্তান শতভাগ নিরাপদ ছিল না। এখন যেমন প্রতি ঘন্টা, দিন, সপ্তাহে শঙ্কা-উদ্বেগে কাটে। যখন-তখন বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী হামলায় মানুষ মারা যায়, তখন ঠিক অবস্থা চরম আকার ধারণ করেনি। তবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিলই এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই সিরিজ হয়েছে।

কেমন ছিল ২০০৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের সেই পাকিস্তান সফর? তখন আসলে পাকিস্তান কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল? ওই সময়ের জাতীয় দলের দুই অপরিহার্য্য সদস্য মোহাম্মদ আশরাফুল আর আফতাব আহমেদ জানালেন, তখনো নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল।

২০০৮ সালে পাকিস্তানের সাথে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আর একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যিনি ছিলেন অধিনায়ক, সেই মোহাম্মদ আশরাফুল আজ বুধবার জাগো নিউজের সাথে ওই দ্বি-পাক্ষিক সফর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেছেন, ‘এখন যেমন পাকিস্তান শুনলেই মৃত্যুঝুঁকির কথা মনে হয়, তখন এতটা না হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। ভয়ে থাকতাম।’

সে ভয়টা কেমন? তার জবাবে আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘তখনো কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম আমরা। আমি তো আমার হোটেল রুমের জানালার ইয়া মোটা ভারি পর্দাই খুলতে ভয় পেতাম। আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে স্যুট রুম পেয়েছিলাম। বিশাল রুম। একদম জানালার পাশে; কিন্তু জানালার পর্দা সরাতাম না। জানালা খুলতেও ভয় পেতাম। এই বুঝি কেউ বোমা ছুঁড়লো। কেউ অতর্কিতে গুলি করলো- এমন চিন্তায় বুক কাপতোঁ।’

পরক্ষণেই আশরাফুল বলেন, ‘আমি জানতাম পাঁচ তারকা হোটেল। আমরা ছিলাম পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেল। কঠোর ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। আমি অধিনায়ক হিসেবে স্যুটে থাকতাম করাচির সেরা পাঁচ তারকা হোটেল। তারপরও সব সময় একট অজানা শঙ্কায় বুক কাঁপতো। এই বুঝি কিছু একটা হয়ে গেল। এমন শঙ্কা কাজ করতো ভিতরে।’

কঠোর সিকিউরিটি সত্ত্বেও ভয়ে থাকতেন আশরাফুলরা। তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি ছিল কঠোর। সামনে পিছনে সর্বত্রই স্বশস্ত্র সদা নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকতো। তারপরও পুরো ট্যুরে আমি একবারের জন্য জানালা খোলা বহুদুরে, পর্দাও সরাইনি। খালি মনে হতো আমাকে বার বা মনে হতো এই বুঝি কেউ বোমা ছুঁড়বে। কিংবা গুলি চালাবে। ইচ্ছে মত কোথাও যাওয়া যেত না। সাধারণত ট্যুরে গেলে আমরা নিজেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘুরতে যাই। এখানে ওখানে যাই। খাবারের স্বাদ পাল্টাতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে যাই; কিন্তু সেবার কোথাও যেতে পদে পদে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা পেয়েছি। তাদের অনুমতির বাইরে কোথাও যাবার সুযোগ ছিল না।’

এরপর আশরাফুল বলেন, ‘বলতে পারেন, অতর্কিত হামলা, বোমাবাজির ভয় ছাড়াও ছিল অতিমাত্রায় নিরাপত্তারক্ষীদের বাড়াবাড়ি। সেটাও এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। একটা উটকো ঝামেলা মনে হতো। সব সময় আশপাশে নিরাপত্তা কর্মীদের ভিড়। কেমন লাগে না। মনে হতো যেন একটা খাঁচায় আবদ্ধ আছি।’

Bootstrap Image Preview