ইহকালের ন্যায় পরকালেও সময় থাকবে। সময়ের গণনাও করা হবে। সেই সময় ও তার প্রকৃতি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহান আল্লাহ যেমন পৃথিবীসহ প্রত্যেক গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য সময়ের ভিন্ন ভিন্ন সীমা নির্ধারণ করেছেন, তেমনি পরকালের জন্য স্বতন্ত্র সময়কাল সৃষ্টি করেছেন। পরকালের সময় বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে একাধিক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যা পৃথিবীর সময় ‘পরিমাপক শব্দে’র অনুরূপ।
আস-সাআ: আরবি আস-সাআর শাব্দিক অর্থ কিছু সময়। আর ব্যাবহারিক অর্থ ‘ঘণ্টা’। কোরআনে শব্দটি কিয়ামত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে।’ (সুরা রোম, আয়াত: ১২)
সকাল ও সন্ধ্যা: জান্নাতবাসীর অবস্থা বর্ণনায় পবিত্র কোরআনে ‘সকাল ও সন্ধ্যা’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সেখানে তারা ‘শান্তি’ ছাড়া কোনো অসার কথা শুনবে এবং সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৬২)
ইয়াউম: ইয়াউম অর্থ দিন। কিয়ামত ও পরকালের অন্যান্য মুহূর্ত বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে ইয়াউম বা দিন শব্দ ব্যবহূত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, যেন তাদের কৃতকর্ম দেখানো যায়।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত : ৬)
সপ্তাহ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায় পরকালে সময় গণনায় ‘সপ্তাহের’ হিসাব থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। যাতে তারা প্রতি শুক্রবার একত্র হবে। তখন উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হয়ে সেখানের ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়ে লাগবে। এতে তাদের রূপ ও সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। ...’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮৩)
বছর: বিভিন্ন আমলের পরকালীন শাস্তি ও পুরস্কারের বর্ণনায় একাধিক হাদিসে ‘সানাহ’ বা বছর শব্দের ব্যবহার হয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিয়ো এবং কিয়ামত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর কোরো। (এ কথা শুনে) আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এরূপ বলছেন? তিনি বলেন, হে আয়েশা! তারা তো তাদের সম্পদশালীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ...’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৫২)
সূ্ত্রঃ মুফতি কাসেম শরীফের লেখা থেকে নেয়া।