Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

হোসাফ পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে জনমনে তীব্র ক্ষোভ, পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৮:৪৬ PM
আপডেট: ০৭ জানুয়ারী ২০২০, ০৮:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মিরআলীপুর ও মীরওয়ারিশপুরে হোসাফ ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র শত শত আবাসিক এলাকা স্থাপন ও ভূমি অধিগ্রহন নীতিমালা অমান্য করে, ক্ষতিপূরনের টাকা থেকে ভূমি মালিকদের বঞ্চিত করার দায়ে হাইকোর্টের পিটিশন ১৪২১৭ নং মামলা রজু করে।

এতে হোসাফ গ্রুপ আপানিয়ার নিকটে আবাসিক এলাকায় ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট নির্মান করেন। পরে চৌমুহনী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও সরবরাহ কেন্দ্রে সংযোগ স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ খুটি ও লাইন সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করেন। স্থানীয় ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধ না করে পিলার স্থাপন ও লাইনের কাজ শুরু করে। এতে ভুক্তভূগীরা ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গেলে প্রকল্প ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম গং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভূমি মালিকদের উপর একাধিকবার হামলা চালিয়ে নারীসহ কমপক্ষে ১০/১২ জনকে আহত করে।

বিদ্যুৎ পিলার ও তার স্থাপন এর জন্য বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ভূমির অধিগ্রহনের ১২ ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেনি হোসাফ কর্তৃপক্ষ। ভূমির প্রকৃত মালিকরা একাধিকবার নির্যাতন নিপিড়নের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন আলো মহসিন বাদী হয়ে জেলা জজ কোর্টে পৃথক পৃথক দুইটি মামলা রজু করে। ২ নং পিলার থেকে ১৩ নং পিলার পর্যন্ত যে উচ্চতায় লাইন ও তার স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে উক্ত লাইনের আশপাশের কোন বসতির অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। কিংবা গাছপালা লাগানো বা ফসল উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ারে তারের সামনে কোন কিছু করা সম্ভব নয়।

সূত্র মতে, ক্ষতিপূরণের কোটি কোটি টাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগাভাগি করলেও প্রকৃত ভূমি মালিকগণ ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২৫ নভেম্বর ১৯ ইং তারিখে ভুক্তভোগিরা এ নিয়ে জেলা প্রশাসক নোয়াখালী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ পৃথক পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েছে।

হাইকোট ডিভিশনের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ এনায়েতুর রহিম ও বিচারক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রুল জারি করেন এবং কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সিনিয়র সচিব পাওয়ার ডিভিশন জ্বালানী মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারী কমিশন কাওরান বাজার ঢাকা, জেলা প্রশাসক নোয়াখালী, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ওয়াপদা মতিঝিল ঢাকা, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নোয়াখালী, নির্বাহী অফিসার বেগমগঞ্জ নোয়াখালী, ম্যানেজার হোসাফ ইলেকট্রিসিটি পাওয়ারপ্লান্ট সেন্টার বেগমগঞ্জ নোয়াখালীকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এলাকাবাসী জানান, রহস্যজনক কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এলাকায় ১/২ কিলো সীমানার প্রায় ১৫০০ বসত-বাড়ী থাকলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের ব্যবহার করে হোসাফের ম্যানেজার অনিয়ম করে দুর্নীতির আশ্রয়ে ক্ষতিপূরনের অর্থ প্রাপ্তি হতে ভূমি মালিকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

লাইন নির্মানের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উভয় পাশে ১৫ ফুট করে মোট ভূমির পরিমান নির্ধারন করার পর ক্ষতি পূরনের টাকা প্রদান করার বিধান রয়েছে। কিছু কিছু ব্যক্তিকে যত সামান্য টাকা প্রদান পূর্বক কাগজে মুছলেখা নিয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে।

এ বিষয়ে জহিরুল ইসলাম ম্যানেজার থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরনের টাকা দেওয়া হয়েছে। মোট কত টাকা প্রদান করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন হেড অফিসে যান। আমি সঠিক বলতে পারছি না।

ক্ষতিপূরনের টাকা না দিয়ে হোসাফের কর্মকর্তারা স্থানীয় দালাল চক্র দিয়ে পার্শ্ববর্তী সড়কের ভূমির অজুহাত করে প্রকৃত মালিকদেরকে তাদের প্রকৃত প্রাপ্য হতে বঞ্চিত করে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে যারা কিছু যত সামান্য টাকা পয়সা নিয়েছে তাদের থেকে জোরপূর্বক মুছলেখা ও আদায় করার অভিযোগ।

অপরদিকে মিরওয়ারিশপুরের মজুমদারবাড়ী, মুন্সি বাড়ী, ইঞ্জিনিয়ার কাশেমের বাড়ী, চাপরাশি বাড়ী, নুরুজ্জামানের বাড়ী, মহাজন বাড়ী, রহিম মাষ্টারসহ শত শত নারী পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয়ভাবে দালাল চক্র দিয়ে হোসাফ মিটার কারখানা স্থাপনের নামে জমি ক্রয় করেছিলো।

কিন্তু এখন দেখা যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম করছে। প্রায় ১০০০ ডিং ভূমি ক্রয় করেছে বলে জানা গেছে। হাইকোর্ট ডিভিশন কার্যক্রমরে উপর স্থগিতাদেশ থাকলে  তারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে ২২ শে ডিসেম্বর থেকে প্রথমিকভাবে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় কারখানার বিকট শব্দে ৩/৪ কিলোর মধ্যে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে এর বর্জ্য তেল ৭/৮ কিলোর মধ্যে একলাশপুর পর্যন্ত বিভিন্ন গাছপালা দালান কোঠায় পুকুর ডোবায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলেন, এখানে ঢাকার জি কে শামীমের চেয়েও বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে।

তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে বলে ধারণা করছে ভুক্তভোগীরা। নোয়াখালীতে উন্নয়ন কাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে জোর যার রাজ্য তার এমনটিই ঘটেছে। প্রশাসনের নিরবতার কারণে সাংবাদিকগন প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

হাইকোর্ট মামলার বিষয়টি নিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, অফিসিয়ালভাবে কোন নির্দেশনার কাগজপত্র পাইনি। যখন পাবো তখন দেখবো।

বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, সেনবাগের পশ্চিম এলাকা, চাটখিলের দক্ষিণ এলাকায় এই কেন্দ্র যদি টানা ৩/৪ মাস চালু থাকে তাহলে বসতবাড়ীতে, পুকুরে, গাছপালার উপর, বজ্য তেলগুলো ছড়িয়ে পড়ার কারনে পরিবেশে মারাত্মকভাবে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এক সময় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, সেনবাগের পশ্চিম এলাকা, চাটখিলের দক্ষিন এলাকা। কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার এর চারদিকে যান্ত্রিক বিকট শব্দ দূষণ দেখা যায়। এই বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

Bootstrap Image Preview