Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কবর থেকে অর্ধশত মৃতদেহের কঙ্কাল উধাও!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারী ২০২০, ১২:৪৩ PM
আপডেট: ০৬ জানুয়ারী ২০২০, ১২:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


মৃত্যু নি:সন্দেহে মানব জীবনের অবধারিত বিষয়। এ থেকে পালানের কোন পথ নেই। প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের রীতি অনুয়ায়ী মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। মানুষ জীবদ্দশায় যদি কিছু সদকায়ে জারিয়া করে যায় তবে কবরে থেকেও তার সওয়াব পেতে থাকে। দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা কবরের কথা ভুলে যাই। শুধু তাই নয়, বর্তমানে কবরেও মানুষের লালসা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না মৃতদেহ।

দিনাজপুরে রাতের আঁধারে কবর থেকে মৃতদেহের কঙ্কাল চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর এবং সদরপুরে টেক্সটাইল বাজার সংলগ্ন কবরস্থান থেকে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও স্বজনদের মধ্যে শুরু হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর গ্রামের একমাত্র কবরস্থানে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মৃত মানুষকে দাফন করা হয়। এ কবরস্থানেই গত ৬ মাস আগে দাফন করা হয় পার্শ্ববর্তী দরবারপুর গ্রামের সোহরাব আলীকে। কিন্তু মঙ্গলবার কবরস্থানে তার পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখেন কবর খোঁড়া এবং কবরে কোন লাশ নেই। এরপর কঙ্কাল চুরির ঘটনা এলাকাবাসীর নজরে আসে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত চার মাস আগে মারা যাওয়া নাজমুল ইসলামের কবরেও লাশ নেই।

উত্তর শিবপুর গ্রামের মো. হোসেন আলী জানান, গত এক মাসে এ কবরস্থান থেকে মোট ২২টি কবরের কংকাল উধাও হয়ে গেছে।

এদিকে ওই কবরস্থানে কোনও সীমানা প্রাচীর নেই। করবস্থানে আলোর জন্য সরকারিভাবে দুটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। তবে বৃহৎ এ কবরস্থানে দুটি সোলার প্যানেল যথেষ্ট নয় বলে মত স্থানীয়দের। তাই সোলার প্যানেলের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

অন্যদিকে একই উপজেলার সদরপুর গ্রামে কবরস্থান থেকেও গত এক মাসে ২০ থেকে ২২টি কঙ্কাল চুরি হয়েছে গেছে।

সদরপুর গ্রামের সোলেমান আলী জানান, গত এক বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। তিন দিন আগে তার কবরস্থানে গিয়ে দেখেন কবরটি খোঁড়া এবং কোনও লাশ নেই। শুধু তার স্ত্রীর কবরেরই এ অবস্থা নয়, অন্য আরও ২০-২২টি কবরের একই অবস্থা।

এ বিষয়ে দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার জানান, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ কবরস্থান পরিদর্শন করেছে এবং কবর থেকে কঙ্কাল চুরির সত্যতা মিলেছে। কঙ্কাল চোর চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং স্থানীয়ভাবে এর সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

শিবপুর দরবারপাড়া ফুরকানিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মো. জারিফুল ইসলাম বলেন, ‘করব থেকে কঙ্কাল চুরির বিষয়টি ন্যক্কারজনক। যারা এ কাজটি করেছে তারা ইসলামের শক্র। তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দিতে হবে।’

সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায় বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কঙ্কাল চোরদের দ্রুত সন্ধান করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে একটি কঙ্কালের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি চক্র এসব কঙ্কাল চুরি করে সায়েন্টিফিক দোকানে বিক্রি করে। দিনাজপুরে এমন সায়েন্টিফিক কোন দোকান নেই। তাই চুরি করা এসব কঙ্কাল জেলার বাইরে নিয়ে বিক্রি করতে পারে।’

Bootstrap Image Preview