Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক নিয়ে ইসলাম কী বলে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২০ PM
আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মুফতি মীযানূর রহমান রায়হান।। 

সম্প্রতি ঢাকার মাতুয়াইলে অবস্থিত শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ নামে একটি প্রজেক্ট চালু করেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ এটাই প্রথম। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মায়েদের স্বেচ্ছায় দান করা দুধ অসহায় নবজাতককে পান করানো। বিষয়টি মানবিক। ইসলাম সব সময় মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে সংকট নিরসনে সঠিক পথ বাতলে দিয়েছে।

 

নবজাতক শিশু নিজ মায়ের অবর্তমানে অন্য মায়ের দুধ পান করবে, বিষয়টি ইসলামে অনুমোদিত। আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ (স) হালিমা সাদিয়ার দুগ্ধ পান করে বড়ো হয়েছিলেন। মাতৃদুগ্ধের সংকটের কারণে তখনকার আরব সমাজে এই রীতির প্রচলন ছিল। বর্তমান সময়েও ইসলাম এই ব্যবস্থা জারি রেখেছে। কোনো নবজাতকের মা মারা গেলে বা অসুস্থ হলে বা বুকের দুধের সংকট দেখা দিলে অন্য মায়েরা যাতে এগিয়ে আসেন, ইসলাম এ ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছে। তবে অন্য মাতৃদুগ্ধ পান করার ক্ষেত্রে ইসলামের যে নির্দেশনা রয়েছে, তা আগে জানতে হবে।

বর্তমানে আইসিএমএইচ যেই ধারায় উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে, তা ইসলাম সমর্থিত নয়; এতে সংকট নিরসনের চেয়ে জটিলতা আরো বাড়বে। মুসলিম বিশ্বের কোথাও এ ধরনের পদ্ধতি চালু নেই। বিষয়টি ইসলামি দেশগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ওআইসির ফিক্হ বোর্ডে উত্থাপিত হলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ তা হারাম ঘোষণা করেন।

ইসলামি শরিয়াহর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘হিফযুন নসল’—বংশীয় সম্পর্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মিল্ক ব্যাংক এই ধারাকে ধ্বংস করবে। সমাজে অজানা অনেক দুধ ভাই-বোনের জন্ম হবে, যাদের সংখ্যা আদৌ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। অজ্ঞাতসারে দুধ ভাই-বোনের মধ্যে যে হারাম বিয়েগুলো সম্পাদিত হবে, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবেন?

অন্য মায়ের দুগ্ধ পানের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো—দুই বছর বয়সসীমার মধ্যে যে শিশু অপর মায়ের দুধ পান করবেন ঐ নারী তার দুধমা এবং তার সন্তানেরা ঐ শিশুর দুধ শরিকি ভাই-বোন হবেন। এই দুধপান সরাসরি হোক বা যেকোনো উপায়ে হোক। রক্ত সম্পর্কীয় কারণে মায়ের যেসব আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম, দুধপানের ক্ষেত্রে দুধমায়ের সেসব আত্মীয়ের সঙ্গেও বিয়ে বৈধ হবে না। (ফাতওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩২)

পবিত্র কুরআনে সুরা নিসার ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন, ‘(বিয়ের জন্য) তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুপু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে এবং (আরো হারাম করা হয়েছে) সেই সব মা, যারা তোমাদের বুকের দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সঙ্গে তোমরা একান্ত মিলিত হয়েছ তাদের আগের ঔরসজাত মেয়েরা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে একান্ত মিলিত না হয়ে থাকো, তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং (তোমাদের জন্য বৈধ নয়) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীগণ। দুইবোনকে একত্র করাও (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)।’

বুখারি শরিফে হযরত ইবন আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, নবি করিম (স) হজরত হামজা (রা)-এর মেয়ে সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা, বংশসূত্রে যে হারাম, দুধপানের কারণেও সে হারাম। আর সে আমার দুধভাইয়ের মেয়ে।’ (হাদিস নম্বর ২৬৪৫)

সুপ্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারলাম, রক্তের সম্পর্কের কারণে মায়ের যেসব আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ নেই, তদ্রূপ দুধ সম্পর্কের কারণেও দুধমায়ের সেসব আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হারাম। তাই যে বাচ্চাটি মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধ সংগ্রহ করে পান করবে, তার জন্য তার দুধমা, দুধপিতা, দুধভাই-বোন ও অন্যান্য মাহরাম শনাক্ত করা অত্যন্ত দুরূহ। অজান্তে যদি কোনো দুধ শরিকি মাহরামের সঙ্গে বিয়ে হয়, তা-ও হারাম হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এই পাপে লিপ্ত থেকে গড়ে উঠবে একটি অবৈধ প্রজন্ম। এজন্য যারা পারিশ্রমিক বা বিনা পারিশ্রমিকে অন্য বাচ্চাদের দুধ পান করাতে চান, হাসপাতালগুলিতে তার তালিকা থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ও সহিহ্ বুঝ দান রুন। আমিন।

লেখক :বাংলাদেশ বেতারের ধর্মীয় আলোচক ও উপস্থাপ

Bootstrap Image Preview