শিল্প, সাহিত্যে ইতালির ইতিহাস অনেক ঋদ্ধ। রোম, মিলান, তুরিন ও নেপলসের মতো ইতালির ছোট-বড় সব শহরেই রয়েছে অসংখ্য জাদুঘর। এর মধ্যে নেপলসে ম্যাসিমো ভিজনাতির অগোছালো ছোট্ট জাদুঘর খুঁজে পাওয়া কঠিন। নেপলসের কোনো মানচিত্র বা ভ্রমণ গাইডে এর অস্তিত্ব নেই। শহরের একটি অপরাধপ্রবণ এলাকার এক আটপৌরে বাড়ির বেসমেন্টে ধুলোর রাজ্যে ঢুঁ মারতে বয়েই গেছে পর্যটকদের! কিন্তু নাপোলি সমর্থকদের কাছে এই জায়গাটা উপাসনালয়ের মতোই পবিত্র।
অখ্যাত এই জাদুঘরের প্রতিটি সংগ্রহেই যে মূর্ত হয়ে আছেন তাদের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনা। আশির দশকে সাত বছর নাপোলিতে খেলেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। নাপোলির সব সাফল্যই এসেছে তার হাত ধরে। দলটির পাড় সমর্থকদের কাছে ম্যারাডোনার অবস্থান আজও দেবেতার কাতারে। ম্যাসিমোর ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত ম্যারাডোনা জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত। কী নেই সেখানে- ম্যারাডোনার ব্যবহৃত বুট, বল, জার্সি আর্মব্যান্ড, মদের বোতল, সোফা, খাট...।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে জোড়া গোলের সেই বিখ্যাত বুটজোড়াও আছে। এসব নিলামে বিক্রি করলে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যেতেন ম্যাসিমো। কিন্তু ভালোবাসা বিক্রি করতে নারাজ তিনি। নাপোলি তাদের সান পাওলো স্টেডিয়ামে ম্যারাডোনার জন্য বড় পরিসরে জাদুঘর বানালে সেখানে সব দান করে দেবেন ম্যাসিমো। প্রায় তিন যুগ ধরে ম্যারাডোনায় আচ্ছন্ন তার পুরো পরিবার।
ম্যাসিমোর প্রয়াত বাবা ছিলেন সান পাওলো স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক। মা ছিলেন ম্যারাডোনার বাড়ির গৃহপরিচারিকা ও রাঁধুনি। ম্যারাডোনার দুই মেয়েকে সামলাতেন তার বোন। আর নাপোলির বল বয় ম্যাসিমো সব ফেলে সারা দিন ম্যারাডোনার পেছনে ঘুরতেন। নিজের ছেলের নাম রেখেছেন তিনি দিয়েগো। ২০১৭ সালে সর্বশেষ নেপলস সফরে এসে সবার আগে ম্যাসিমোর মা লুসিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন ’৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন মহানায়ক। বুকে টেনে নিয়ে কেঁদেছিলেন ১১ সন্তানের মা লুসিয়ার কাছে ম্যারাডোনা হলেন দ্বাদশ সন্তান। আর ম্যাসিমোর কাছে দেবতা! এমন শর্তহীন ভালোবাসা আর আবেগই নেপলসে অমর করে রাখবে ম্যারাডোনাকে।