Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগও

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০৩ PM
আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম বলে পরিচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। লক্ষ্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐকমত্য গঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অধিকার আদায়’। কিন্তু এ মঞ্চের সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধিকার দাবিতে কোনো কর্মসূচি পালনের চেয়ে হামলা-মারামারিতেই তারা লিপ্ত থেকেছে বেশি। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজনকে মেরে হাসপাতালেও পাঠিয়েছেন এ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

গত ২০ অক্টোবর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডির বায়োতে লেখা ছিল ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’। এই লেখাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর। এতে ছাত্রদলের প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

ওই ঘটনার কিছুদিন পর ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের একটি কথিত ফোনালাপকে কেন্দ্র করে ডাকসুতে তার কার্যালয়ে তালা দেয় এবং নুরের কুশপুতুল দাহ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আরেক অংশের নেতা অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিনপন্থীরা।

সবশেষ ভারতে বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে আন্দোলনরত দেশটির ছাত্র-জনতার প্রতি সংহতি জানিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর ডাকসুর ভিপি নুর ও তার অনুসারীরা সমাবেশ করতে গেলে সেখানেও হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এতে ‍ভিপি নুরসহ ১০ জন আহত হন, তাদের অনেককেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।

এ ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় ভিপি নুরের পক্ষে প্রতিবাদলিপি দিতে নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনে গেলে সেখানেও হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে আহত করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

পরদিন এসব হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গেলে সেখানেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ত্রাসের সৃষ্টি করেন।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এসব কার্যক্রমে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠন ও তাদের নেতারা অস্বস্তিতে রয়েছেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বললে প্রায় সবাই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনো সংগঠন নয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাথে আমাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগের কেউ অন্য কোনো সংগঠন করতে পারবে কি-না, এ প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। ছাত্রলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমাদের যে কেউ চাইলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত হতে পারে। এ নিয়ে আমরা কোনো বাধা দেই না। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ক্ষেত্রেও আমাদের সিদ্ধান্ত একই।

আল নাহিয়ান খান জয় জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে ছাত্র সংগঠন হিসেবে দেখছেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আসলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নয়। এটার নাম হওয়া উচিত ছিল দালালি এবং ভণ্ডামি মঞ্চ। তাদের নেতাদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠন অথবা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কাজ করবে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কোনো ছাত্র-সংগঠন বা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, আবার তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করবে এমন সংগঠনও নয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে দালাল ও ভণ্ডদের সংগঠনের কাজটা কী, তা আসলে উদ্বেগের বিষয়।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কার্যক্রম আমাদের হতবাক করছে। এ মঞ্চের কোনো ভালো কার্যক্রম আমরা দেখিনি। তারা কয়েক মাস আগে মধুর ক্যান্টিনে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। ডাকসু ভিপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে তারা হামলা করেছে। কোনো ছাত্র সংগঠন না হয়েও কীভাবে তারা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মহড়া দেয় তা আমাদের রীতিমতো অবাক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই সংগঠনটি কীভাবে কার্যক্রম চালায় তা আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো ছাত্রলীগের বাইরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী মতকে দমন-পীড়ন করতে পারে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক মুহাম্মদ রাঁশেদ খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সস্তা দামে বিক্রি করছে। তারা আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার বা মুক্তিযুদ্ধের কোনো কিছু বাস্তবায়ন করছে না। তারা পর্দার আড়ালে আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দমন করতে গঠন করা হয়েছিল। তারা ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক, কারও ওপর হামলা করতে বাদ রাখেনি। শহীদ মিনারে শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছিল। ভিপির ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা উপাচার্যের বাসায় প্রতিবাদলিপি দিতে গেলে সেখানেও তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা কাউকে জানিয়ে সেখানে যাইনি, তারপরও তারা কীভাবে সেখানে গেল সেটি সন্দেহের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাইম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নিয়ে কাজ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কমান্ড রয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কী নিয়ে কাজ করছে বা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে আমরা বেশ সংশয়ে আছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা পরিপন্থী কাজ করছে, তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তা-ই প্রমাণ করছে। তাদের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তরুণদের বিদ্বেষ সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ছিল মৌলবাদবিরোধী উদার চিন্তার বাস্তবায়ন, তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধার মাধ্যমে তাদের নগ্ন চরিত্র ফুটে উঠেছে। সূত্র- জাগোনিউজ

Bootstrap Image Preview