যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যেসব অবরোধ আরোপ করে রেখেছে তা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
গতকাল শনিবার কাতারে এক কূটনৈতিক সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন বলে মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মাহাথির মোহাম্মদ দোহা ফোরামে যোগ দিতে কাতার সফরে আছেন। সেখানে তিনি কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে আলোচনা করেন। বিভিন্ন সময়ে ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ আরোপের বিষয়টির সমালোচনা করেন তিনি।
মাহাথির বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে একতরফা মার্কিন অবরোধ সমর্থন করে না মালয়েশিয়া। দেশটির ওপর মার্কিন অবরোধের কারণে মালয়েশিয়া ও অন্য দেশগুলো ইরানের বড় একটি বাজার হারিয়েছে। যা স্পষ্টতই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কেবল জাতিসংঘ তার সনদের আওতায় এমন অবরোধ আরোপ করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৫ সালে বিশ্বের পাঁচ পরাশক্তির সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
গত অক্টোবরের শেষে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘ম্যাক্সিমাম প্রেশার: ইউএস ইকোনমিক স্যাংকশনস হার্ম ইরানিয়ানস, রাইট টু হেলথ’ নামে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানিদের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়ার অধিকার মারাত্মক হুমকির মুখে।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামার শাসনামলেও একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইরানের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছিল। তবে ২০১৫’র চুক্তির পর কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। কিন্তু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর থেকে তুলে নেয়া নিষেধাজ্ঞার সবকিছু আবার বহাল ছাড়াও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন এসব নিষেধাজ্ঞা ইরানের তেল রফতানি, ব্যাংক, জাহাজ শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিক সব খাতেই মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ৭০০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, উড়োজাহাজ, প্রধান প্রধান ব্যাংক, তেল রপ্তানিকারক ও জাহাজ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ইরানের অর্থনীতি এমনিতেই দীর্ঘদিন থেকে মন্দাবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম কমায় এই অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। দুই বছর আগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে দেশটি খানিকটা হাঁফ ছাড়ার সুযোগ পেলেও গত বছরের নভেম্বর থেকে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশটি ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।