রাখাইনে মিয়ানমারের গণহত্যার বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ হচ্ছে গাম্বিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা। গাম্বিয়া মিয়ানমারকে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তাই শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চিকে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের শিক্ষা দিচ্ছে গাম্বিয়া।
অং সান সু চি যথারীতি সব জলাঞ্জলি দিয়ে গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। আর এদিকে আবুবকর লজ্জায় ফেলে দিলেন মানবতার স্বঘোষিত অভিভাবক, আত্মীয়, মালিক ও সেবায়েতদের।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারে গাম্বিয়াকে সমর্থন জানাতে ১৫০ রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কানাডা ও নেদাল্যান্ডস।
যৌথ বিবৃতি শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দেশ দুটি এ আহ্বান জানিয়েছে। কানাডা ও নেদারল্যান্ড যৌথভাবে বলছে, যুগের পর যুগ ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নির্যাতন, হত্যা, আগুনে পুড়িয়ে মারা, অত্যাচার করতে করতে মেরে ফেলা, ধর্ষণসহ নানা অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
কানাডা এবং নেদারল্যান্ডস মনে করে, এ অনাচারের ঘটনায় গাম্বিয়া যেভাবে মিয়ানমারকে আদালতের মুখোমুখি করেছে তাতে সবার সমর্থন জানানো উচিৎ। যেন মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য প্রকৃত দোষীরা জবাবদিহিতার আওতায় আসে। এ জন্য জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে (বিশ্বের ১৫০টি দেশ) যে সব রাষ্ট্র সই করেছে তাদের সবাইকে এই ইস্যুতে গাম্বিয়ার পক্ষে সমর্থন জানানো উচিৎ।
এদিকে, নেদারল্যান্ডসের হেগের আইসিজেতে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) শেষ দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের বিপক্ষে যুক্তিতর্ক খণ্ডন শেষ করে গাম্বিয়া। এই সময় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে আদালতের কাছে ছয়টি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত এক বার্তায় জানিয়েছে, গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় সব পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত খুব শিগগিরই তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে দেবে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের মাধ্যমে যে গণহত্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেটা দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বছরের ১১ অক্টোবর মিয়ানমারকে চিঠি দেয় গাম্বিয়া। মিয়ানমার ওই চিঠির জবাব না দেওয়ায় গাম্বিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে ওআইসির পক্ষে নভেম্বরের ১১ তারিখ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলা করে।
মিয়ানমারে বিরুদ্ধে মামলার মূল উদ্যোক্তা হচ্ছেন গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অনেক দেশই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করতে পারত। কিন্তু সবাই যখন আহা-উহু করে, নিন্দা জানিয়ে বিষয়টি পার করে দিচ্ছিল, ঠিক তখনই গণহত্যার মামলা করে গাম্বিয়া সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করল।
আন্তর্জাতিক আদালতে রায় কী হবে, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু গণহত্যার মামলা হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন অন্তত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারকে গণহত্যাকারী বলা যাবে। আবুবকর প্রমাণ করে দিলেন, একজন ব্যক্তিই ইতিহাসে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।
দেশ হিসেবে গাম্বিয়া খুব বেশি প্রভাবশালী বা পরিচিত না। আফ্রিকার রাজনীতি বা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গাম্বিয়ার কোনো প্রভাবের কথা তেমন শোনা যায় না। এমনকি ওআইসিতেও গাম্বিয়াকে বড় ধরনের শক্তি হিসেবে কেউ বিবেচনা করে না। তবে গাম্বিয়া মানবিকতার দিক থেকে এখন শীর্ষেই থাকবে।