আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইজেসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার গণহত্যা মামলা রোহিঙ্গা সংকটকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে বলে সতর্কতা জানিয়েছেন অং সান সু চি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের হেগে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শেষ দিনের শুনানিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মিয়ানমারের এজেন্ট স্টেট কাউন্সিলর সু চি।
আদালতকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলা খারিজ করে দেওয়ার আবদার জানিয়ে সু চি বলেন, গাম্বিয়ার এ মামলাকে আর আগ বাড়তে দেওয়া হলে তা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার আশঙ্কা আছে।
এককালে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সু চিকে বন্দি করে রাখে, তাদের সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, আমি আদালতের কাছে আবেদন জানাই, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে তারা যেন এমন সিদ্ধান নেন, যা আমাদের একতা স্থাপনে সাহায্য করে।
রাখাইনে পুনরায় শান্তি ফিরে আসছে দাবি করে মিয়ানমার নেত্রী বলেন, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কেবলই বিশ্বাস দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ভঙ্গুর এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে নতুন করে সন্দেহ বা সংশয় রোপণ করতে পারে বা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে অসন্তুষ্টি তৈরি করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ পুনর্মিলনকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
‘চলমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের সমাপ্তি টানাই আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু একই সঙ্গে উত্তর রাখাইনে যেন ২০১৭-১৭ সালের মতো পুনরায় সশস্ত্র সহিংসতা পুনরুজ্জীবিত না হয় তা নিশ্চিত করাও আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শুনানিতে অংশ নিয়ে সু চি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা গণহত্যার স্বীকার এর কোনো প্রমাণ নেই।
অং সান সুচি গতকাল ঐ আদালতকে বলেন, রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা যে বিপুল সংখ্যায় সে দেশ ত্যাগ করছিল, তার উৎপত্তি হয়েছিল অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে যা শুরু হয়েছিল সমন্বিত এবং সামগ্রিক সশস্ত্র আক্রমণের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন যে, মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বিভাগ এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং এতে যে সশস্ত্র সংঘাত হয়েছে তার কারণেই কয়েক লক্ষ মুসলমান সে দেশ ত্যাগ করেছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভূমিকায় আদালতে হাজির হয়ে তিনি তাঁর সরকারের এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন যে সেনাবাহিনী কেবল মাত্র রোহিঙ্গা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছিল যারা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি‘র ৫৭ টি সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে এই মামলা করে।
গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদদাতাদের বলেন তিনি চান যে এই আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত, গণহত্যা মামলার পূর্ণ শুনানী না হওয়া পর্যন্ত , রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপের আদেশ দেয়। কয়েক সপ্তার মধ্যেই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে আদালত রায় দিতে পারে।