Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইত্যাদিতে ভাইরাল আমেরিকান ডাক্তার দম্পতি প্রশংসায় ভাসছেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৫ PM
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নিউজিল্যান্ডের নাগরিক ড: এড্রিক বেকার আরাম আয়েশের জীবনকে পেছনে ফেলে এসে জীবন কাটিয়েছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে। দরিদ্র মানুষকে সেবাদানের লক্ষ্যে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন হাসপাতাল; টানা ৩২ বছর ধরে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। সবাই তার মানবসেবায় মুগ্ধ হয়ে ডাক্তার ভাই বলে ডাকতেন।

বছর পাঁচেক আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে গ্রামবাসী খুব করে চেয়েছিলেন তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে। কিন্তু তিনি ঢাকা যাননি, তার ইচ্ছা ছিল নিজের তৈরি হাসপাতালেই তার চিকিৎসা হোক। অবশেষে নিজ হাসপাতালেই ২০১৫ সালে মারা যান ড: এড্রিক বেকার।

মৃত্যুর আগে তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যেন দেশের কোনো ডাক্তার গ্রামে এসে তার প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরেন। কিন্তু হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুসারে- এ দেশের একজন ডাক্তারও তার সেই আহ্বানে সাড়া দেননি।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দেশের কোন ডাক্তার সাড়া না দিলেও তার আহ্বানে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন আরেক মানবতাবাদী ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি। যে দেশে যাওয়ার জন্য দুনিয়ার সবাই পাগল সেই আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন পেছনে ফেলে বাংলাদেশে এসে গ্রামের ধুলামাটির সঙ্গে পেতেছেন সুখের সংসার। উদ্দেশ্য শুধু একটাই, দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া।

নিজেদের সন্তানদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন তারা। ভর্তি করেছেন গ্রামেরই স্কুলে। তারা থাকেন মাটির ঘরে। ডা. জেসিন লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার স্ত্রী মেরিন্ডি পরছেন শাড়ি। দুজনই বাংলা শিখে অনর্গল বাংলায় কথা বলছেন। তাদের ছেলেমেয়েরাও শিখছে বাংলা।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই ডাক্তার দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। দরিদ্র মানুষদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের হাল ধরে প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান এই দম্পত্তি।

ড: জেসিন জানান, ড: এড্রিক বেকার বেঁচে থাকার সময় কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছিলেন। পরে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে জেসন অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে জেসন বাংলাদেশে আসতে পারেননি।

অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন মধুপুরে। জেসন হয়ে ওঠেন নতুন ডাক্তার ভাই আর মেরিন্ডি হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় ডাক্তার বিবি।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন এই দম্পত্তি। তবে ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশি ডাক্তারদের গ্রামে গিয়ে দরিদ্র মানুষের সেবার আহ্বান জানিয়েছেন জেসন-রেরিন্ডি। তারা মনে করেন, দরিদ্র এসব মানুষের জন্য আরও ভালো চিকিৎসা দরকার।

তাদের নিয়ে ইত্যাদির প্রতিবেদনটি ভাইরাল হওয়ার পরে অনেকেই জেসিন-মেরিন্ডি দম্পত্তির প্রশংসা করছেন। সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসে দরিদ্র মানুষের সেবা করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা তা নজিরবিহীন বলেও দাবি করছেন তারা। পাশাপাশি নিজের দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা দিতে কোন ডাক্তার এগিয়ে না আসায় লজ্জিতবোধ করছেন অনেকেই।

Bootstrap Image Preview